Close

আল্লাহ কেন মানুষকে কষ্ট দেন?– এক হৃদয়গ্রাহী আত্মবিশ্লেষণ

মানুষের জীবনে কষ্ট একটি চিরন্তন বাস্তবতা। এই দুনিয়ায় এমন কোনো মানুষ নেই যে কখনো দুঃখ বা বেদনার মুখোমুখি হয়নি। জীবনের কোনো না কোনো সময় সবাইকেই কষ্ট পোহাতে হয়—হোক তা শারীরিক, মানসিক, আর্থিক বা সম্পর্কজনিত। প্রশ্ন জাগে, আল্লাহ এত দয়ালু, এত করুণাময় হয়েও কেন আমাদের কষ্ট দেন?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে কেবল আবেগ দিয়ে নয়, বরং বিশ্বাস, যুক্তি ও আল্লাহর বাণীর আলোকে বুঝতে হবে কষ্টের গভীর তাৎপর্য।

১. কষ্ট হলো পরীক্ষা

আল্লাহ এই পৃথিবীকে বানিয়েছেন পরীক্ষার স্থান হিসেবে। প্রতিটি কষ্ট, প্রতিটি বিপদ মানুষের ধৈর্য, ঈমান ও চরিত্রের একটি পরীক্ষা।
আল্লাহ কুরআনে বলেন:

“আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, ধন-সম্পদ ও জীবনের ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে। আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।”
(সূরা আল-বাকারা ২:১৫৫)

মানুষ যখন সংকটে পড়ে, তখন তার ভেতরের শক্তি ও আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতা প্রকাশ পায়। আগুন যেমন সোনাকে পরিশুদ্ধ করে, তেমনি কষ্ট একজন মানুষকে পরিপূর্ণ ও মজবুত বানায়।

২. কষ্ট পাপ মোচনের মাধ্যম

কষ্ট শুধু পরীক্ষা নয়, বরং অনেক সময় পাপের কাফফারাও বটে। হাদীসে আছে:

“একজন মুসলমান যত কষ্টে পড়ে—চিন্তা, দুঃখ, রোগ বা ব্যথা—তা দ্বারা আল্লাহ তার কিছু পাপ মোচন করে দেন, এমনকি একটি কাঁটাও যদি তাকে বিঁধে।”
(সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

এই হাদীস প্রমাণ করে যে, আমাদের জীবনের প্রতিটি কষ্ট কোনো না কোনোভাবে কল্যাণকর এবং তা আমাদের আত্মিক পরিশুদ্ধির উপায়।

৩. আল্লাহর দিকে ফেরার সুযোগ

মানুষ সুখে থাকলে অনেক সময় আল্লাহকে ভুলে যায়। কিন্তু যখন বিপদ আসে, তখন মানুষ আল্লাহর দিকেই ফিরে যায়, দোয়া করে, কান্নাকাটি করে। এই ফিরে আসাটাই আল্লাহর জন্য সবচেয়ে মূল্যবান। তাই অনেক সময় আল্লাহ মানুষকে কষ্ট দেন যাতে সে আবার তাঁর দিকে ফিরে আসে।

৪. দুনিয়ার চেয়ে আখিরাত বড়

এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, আর আখিরাত চিরন্তন। দুনিয়ার কষ্ট যদি মানুষকে আখিরাতের শান্তির পথে নিয়ে যায়, তবে সেই কষ্ট আসলে নেয়ামত। আল্লাহ বলেন:

“তোমরা কি মনে করো, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ তোমাদের পূর্ববর্তীদের মতো কষ্ট তোমাদের ওপর আসেনি?”
(সূরা আল-বাকারা ২:২১৪)

আসলে আখিরাতের সুখ অর্জনের জন্য দুনিয়ার সাময়িক কষ্ট অনেক বড় বিনিময়ের পথ।

৫. কষ্টের মাঝেও রহমত থাকে

আমরা অনেক সময় বুঝি না কেন আমাদের জীবনে কোনো বিপদ এলো, কিন্তু পরবর্তীতে তা আমাদের জন্য কত উপকারী ছিল, তা স্পষ্ট হয়। আল্লাহর পরিকল্পনা আমাদের চেয়ে অনেক বড়। তাঁর দেওয়া কষ্টের পেছনেও থাকে এক সুদূরপ্রসারী মঙ্গল।

৬. ধৈর্যবানদের জন্য রয়েছে মহান প্রতিদান

আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বারবার ধৈর্যশীলদের মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন:

“ধৈর্যশীলদের তাদের ধৈর্যের বিনিময়ে অসীম পুরস্কার দেওয়া হবে।”
— (সূরা আয-যুমার, ৩৯:১০)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, কষ্টের সময় ধৈর্য ধারণ করা শুধু আখিরাতের সাফল্যের চাবিকাঠি নয়, বরং তা আল্লাহর নিকট একজন বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করে।

৭. নবী ও রাসূলদের জীবনেও ছিল কষ্ট

আমরা যদি ইতিহাস দেখি, তাহলে দেখতে পাই আল্লাহর প্রিয় নবী-রাসূলগণও ছিলেন কঠিন কষ্ট ও বিপদের মুখোমুখি।

  • হযরত আইউব (আ.) দীর্ঘদিন রোগে ভুগেছেন, কিন্তু ধৈর্য হারাননি।
  • হযরত মূসা (আ.) তাঁর জাতির বিদ্রোহ ও অবিশ্বাসের মুখে ধৈর্য ধরেছেন।
  • আর আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে ছিল নিদারুণ দুঃখ, প্রিয়জনদের মৃত্যু, বর্জন, নির্যাতন — তবুও তিনি আল্লাহর প্রতি অটুট আস্থা রেখে বলেছেন:
    “আমি আল্লাহর উপরই ভরসা রাখি, আর তিনিই সর্বোত্তম উপায়নির্মাতা।”

৮. কষ্ট মানুষকে বিনয়ী করে

অহংকার ও আত্মতৃপ্তি মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু কষ্ট মানুষের হৃদয়কে নম্র করে, তাকে মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তোলে। এক সময় যে ব্যক্তি হয়তো কারও কষ্ট বুঝত না, সে নিজে কষ্ট পেলে অন্যের দুঃখ অনুভব করতে শেখে। এটি মানবিকতা ও পরিপূর্ণ চরিত্র গঠনের একটি পথ।


৯. প্রত্যেক অন্ধকারের পরেই আসে আলো

আল্লাহ কুরআনে বলেন:

“নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে রয়েছে স্বস্তি।”
— (সূরা ইনশিরাহ, ৯৪:৬)

এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কষ্ট কখনো স্থায়ী নয়। এটা একটি ধাপ মাত্র—যার পরেই আল্লাহ তায়ালা স্বস্তি, প্রশান্তি ও কল্যাণ এনে দেন। একটি কষ্টপূর্ণ রাতের পরই আসে নতুন সূর্যোদয়।

১০. দোয়ার শক্তি কষ্টে সবচেয়ে বড় আশ্রয়

কষ্টের মুহূর্তগুলোতে দোয়া মানুষকে শক্তি দেয়, আশার আলো জ্বেলে রাখে। মহানবী (সা.) বলেছেন:

“দোয়া হচ্ছে ইবাদতের মজ্জা।”

আল্লাহ কখনো কোনো দোয়া ফেলেন না। হয়তো সময় লাগতে পারে, হয়তো উত্তরটা হবে অন্যরকম, কিন্তু বান্দার কান্না কখনোই তাঁর অজানা থাকে না।

শেষ কথা

আল্লাহ মানুষকে কষ্ট দেন না কারণ তিনি রুষ্ট, বরং কষ্টের মাধ্যমে তিনি মানুষকে শুদ্ধ করেন, তাঁর দিকে ফিরিয়ে আনেন এবং জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। একজন মুমিনের দায়িত্ব হলো ধৈর্য ধরা, দোয়া করা এবং বিশ্বাস রাখা যে, আল্লাহর দেওয়া কষ্ট কখনোই অনর্থক নয়। কষ্টের ভেতরেই লুকিয়ে থাকে রহমত, শিক্ষা ও অফুরন্ত কল্যাণ।

কষ্ট কোনো অভিশাপ নয় — বরং একজন মুমিনের আত্মিক উন্নতির সিঁড়ি। দুনিয়ায় যত কষ্টই আসুক না কেন, একজন মুমিন বিশ্বাস করে যে, “আমার রব জানেন আমি কতটা শক্তি নিয়ে এই কষ্ট বহন করছি।” তাই তোমার কষ্টের প্রতিটি অশ্রু, প্রতিটি দোয়া, প্রতিটি রাতের নিরব কান্না—সবই আল্লাহর দরবারে হিসেব রাখা হচ্ছে।

আসুন আমরা এই বিশ্বাসে অটুট থাকি যে, আল্লাহ আমাদের কখনো একা ফেলে দেন না। আমাদের কষ্ট হয়তো এই দুনিয়ায় বোঝা মনে হয়, কিন্তু আখিরাতে তা হবে এক অমূল্য পুরস্কারের পথ।

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক আমি পেশায় একজন ড্রাইভার। কিন্তু ছোট থেকেই লেখা লেখি পছন্দ করি এবং লিখিও, আমি যা কিছু লিখি তা বাস্তবতা থেকে লিখি কারণ মানুষ যাতে বুঝতে পারে গল্পের কথা গুলো এবং অনুভব করতে পারে। আপনারা আমাকে সাপোর্ট করলে নতুন নতুন গল্প ও উপন্যাস আপনাদেরকে উপহার দিব। ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Leave a comment
scroll to top