তারা বাসায় দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, তার বাসায় সে ব্যতীত আরো দু’টি মেয়ে থাকে তাদের কথোপকথন শুনছে। একটি মেয়ে বলছে।
“তুই ওকে দেখেছিস কেমন ক্ষ্যাত টাইপের।
অন্য একটি মেয়ে।
“ও এতিম নেহা। কত কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহ করছে তুই তো দেখছিস তাও এমন কথা বলছিস।
“বলবো না তুই দেখছিস ও কেমন ড্রেস পড়ে,ওর কি কোনো জামা কাপড় নেয়।
“”যাষ্ট স্টে-আপ নেহা, এসব কোন ধরণের কথা। ওর ফ্যামিলির কেউ নেই আত্মীয় স্বজন নেই। আমরা তো ওকে সাপোর্ট করবো তাই না।
“তোর এতো দরদ কেনো।
“বিকজ আমার মনে মায়া দয়া আছে।
“ওর মতো ফকিন্নি মেয়ের প্রতি দরদ দেখানোর দরকার নেই।
“তুই কি বুঝিস ফ্যামিলি না থাকার কষ্ট। এসব ননসেন্স কথা বলার কোনো মানে হয় না।
“আমি কিছু বুঝতে চাই না, যাষ্ট ওকে আমি আর আমার চোখের সামনে দেখতে চাই না।
“তুই বুঝতে পারছিস ও এসব শুনলে কত কষ্ট পাবে।
“এই ডোন্ট কেয়ার নিলি।
“প্লিজ স্পট।
তারার চোখের পানি বাঁধ মানছে না, এতিম দের কি দুনিয়াতে বেঁচে থাকার অধিকার নেই। কেনো এমন হলো তার জীবনে তার চোখ একটা সুখের জীবন হতে পারতো। কিন্তু কেনো হলো না আল্লাহ কি তার জীবনে শান্তি লেখেনি। কান্নারত বিধ্বস্ত এক মুখশ্রী তারা তার চোখের জল মুখে নিজেকে শান্ত করার প্রয়াস চালাচ্ছে। যখন একটু শান্ত হলো তখন তিন তালায় হাটা দিলো।
একটি রুমের সামনে দাঁড়ালো।এখন ১০:৩০ বাজে এই সময় কাউকে বিরক্ত করা উচিত হবে কি না তাই ভেবে চলেছে। অনেক সাহস সঞ্চয় করে কলিং বেলে চাপ দিলো।মিনিট একের মাঝে এক বৃদ্ধ দরজা খুলে দিল তারা বৃদ্ধ টির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসার চেষ্টা করে বললো।
“আসসালামু আলাইকুম আংকেল।
বৃদ্ধ টি বরাবরই এই মেয়েটির ব্যবহার দেখে মুগ্ধ হয়,আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বৃদ্ধটি মুখে এক ভালো লাগার হাসি, তিনি তারার দিকে তাকিয়ে বললো।
“ওয়ালাইকুম সালাম তারা মা ভেতরে এসো।
তারা বিনা বাক্যে বৃদ্ধ টির দিকে তাকিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।রুমে প্রবেশ করতে দেখলো একজন বৃদ্ধা সোফায় বসে চা খাচ্ছে, বৃদ্ধ টি দরজা লাগিয়ে বৃদ্ধার পাশে বসে।তারাকে একটি সিঙ্গেল সোফায় বসার জন্য ইশারা করে।তারা মুচকি হেসে তার কথা অনুযায়ী বসে পড়ে, বৃদ্ধাটি তারার দিকে তাকিয়ে বললো।
“তুই এতো রাতে এখানে কেনো তারা।
তারা মাথা নত করে বললো।
“একটা কথা বলতে এসেছিলাম।
বৃদ্ধাটি হয়তো বুঝলো কি কথা বলতে এসছে।তবুও তিনি সেই প্রসঙ্গে না গিয়ে বললো।
“একটু চা দেয় খাবি।
তারা ডানে বামে মাথা নেড়ে “না” সূচক মাথা নাড়লো। বৃদ্ধ টি তার দিকে তাকিয়ে বললো।
“তারা কি বলতে এসেছিলে।
তারা আগের ন্যায় মাথা নত রেখে,একটু সংকোচ বোধ নিয়ে বললো।
“আমি বাসাটা ছেড়ে দিতে চাইছি দাদু।
বৃদ্ধ চোখ ছোটো ছোটো করে বললো।
“বাসায় কোনো সমস্যা তারা।
তারা চটপট মাথা তুলে ডানে বামে মাথা নেড়ে “না” সূচক সম্মতি দেয়।আর মুখে বললো।
“বাসায় কোনো সমস্যা নেই,আসলে আমার এড-যাষ্ট করতে কষ্ট হচ্ছে।
বৃদ্ধ আহত কন্ঠে বললো।
“আমি জানি তোমার এখানে থাকতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তারা, বরং নিলি বা নেহার কোনো সমস্যা হচ্ছে।তার জন্য তুমি থাকতে চাইছো না, তবে এখানে তো আমাদের কিছু করার নেয়।ছেলে দুটো কে মানুষ করলাম একজন বউ বাচ্চা নিয়ে বিদেশে থেকে গেলো।আর একজন আমাদের ত্যাগ করে দিলো।এখন এই দুইতালার পুরোনো বাড়ি থেকে যা পায় তা দিয়ে সংসার করতে হচ্ছে। নয়তো জীবিকা নির্বাহ করা যে অনেক কঠিন তা তোমার থেকে কে বুঝবে।এখন আমার বয়স হয়েছে তবে আমার একটা দুঃখ তোমার মতো মেয়েকে নিজের কাছে রাখতে পারবো না।তুমি অত্যন্ত ভালো একজন মেয়ে তারা তবে আমাদের দুর্ভাগ্য এমন যে তোমাকে রাখার ক্ষমতা হচ্ছে।
বৃদ্ধর চোখে পানি ছলছল করছে। বৃদ্ধা নির্বিকার শূন্যে বসে আছে।যেনো তার কোনো অনুভূতি নেয়, সে এক অনুভূতি হীন প্রানী।তবে সত্যি কি তাই নাকি দুই ছেলে কে হারিয়ে আজ এক মা নিঃশেষ হয়ে গেছে।তারা বৃদ্ধর এক হাত ধরে বললো।
“মন খারাপ করবেন না দাদু,আমি যে সকলের জীবনে ক্ষনিকের অতিথি।আমাকে সারাজীবন নিজের কাছে বহন করার ক্ষমতা এখনো কারো হয়নি।
বৃদ্ধ অন্য হাত দিয়ে তারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো।
“দেখো তোমার জীবনে একজন মানুষ আসবে,যে তোমার সাথে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত থাকার ওয়াদা নিয়ে আসবে।
তারা মনে মনে ভাবলো তার এই কষ্টের জীবনে নতুন কারো আগমন না ঘটুক সে চাই না।এমন জীবন অন্য কাউকে আল্লাহ দিক বা সে অন্য কারো সাথে জরাক। এভাবে সারাজীবন থাকবে,এভাবে একদিন কাফনেল কাপড়ে জরিয়ে যাবে।তবে বৃদ্ধর মন রাখার জন্য বললো।
“ইনশাআল্লাহ।
“আমিন কোথায় বাসা নিবে তারা।
“আজকে তো ২২ তারিখ দেখি এই এক সপ্তাহে কোনো ভালো বাসা পায় কী না। আমাকে শুধু এক সপ্তাহ সময় দিন।
এবার বৃদ্ধা আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বললো।
“আমরা যদি পারতাম,চিরজীবন তোকে সময় দিতাম।তবে আজকে আমাদের হাত পা বাঁধা রে।
তারার চোখের পানি চিকচিক করছে, কিন্তু মুখে মুচকি হাঁসি নিয়ে বললো।
“বুঝতে পারছি তো দিদা মন খারাপ করো না, আল্লাহ যা রাখছে কপালে।
“হ্যাঁ তোর জন্য একটা কাজ পাইছি করবি।
“কি কাজ দিদা।
বাম পাশের মিনি টেবিলে ইঙ্গিত করে বললো।
“ওইখানে দেখ একটা কাগজ আছে।
তারা তার কথা মতো উঠে যায়, বৃদ্ধার কথা মতো টেবিল থেকে একটি কাগজ নিয়ে আসলো।তা বৃদ্ধার হাতে দিলো। বৃদ্ধা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে স্নান হেসে বললো।
“এখানে একটা চাকরির বিজ্ঞাপন আছে, এখানে পাঁচ ঘন্টা কাজ করবি।মাসে ছয় হাজার আর দুইটা টিউশন আছে চাইলে করতে পারিস।
তারার মুখ যেনো উৎফুল্ল-তায় ভরে উঠলো,সে বৃদ্ধার দিকে তাকালো। বৃদ্ধা মুচকি হেসে বললো।
“তুই রাজি।
“অবশ্যই একটা বাসা পায়,তারপর চাকরি ছেড়ে দিবো।
“আচ্ছা।
তারা বৃদ্ধা কে জরিয়ে ধরে বললো।
“I love you dida..
বৃদ্ধা মুচকি হাসে, বৃদ্ধও মুচকি হাসে।
বৃদ্ধ তাকে বললো।
“এখন দাদি কে পেয়ে আমাকে ভুলে গেলে নাকি।
তারা মুচকি হেসে বললো।
“কি যে বলেন দাদু আপনারা তো এখন আমার আত্মীয়।
বলেই তিনজন মুচকি হাসলো, বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা তারা দুইজন বেশ খুশি।এই এতিম মেয়েটার জন্য কিছু করতে পেরে তারা দুইজন সবসময়।সবার সাথে গম্ভীর হয়ে থাকলেও,এই একটা মেয়ের কাছে যেনো। মোমের মতো তাদের গাম্ভীর্য গলে যায়।
আকাশে সূর্যের রশ্মি দেখা মিলছে, ফ্রেব্রুয়ারি মাস কেমন এক গুমোট পরিবেশ।সকাল নয় টা তারা একা একা হেঁটে কোথাও যাচ্ছে।দুই গ্লাস পানি খেয়ে বের হয়ে পড়েছে।তাও চিন্তা এক সপ্তাহের ভেতর নতুন বাড়ি খুঁজতে হবে।তাই তো কলেজ শুরু হওয়ার এক ঘন্টা আগেই তার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়েছে।তার ভাবনার মাঝে হঠাৎ তার খেয়াল হলো তার সাথে সাথে কেউ হাঁটছে।তারা তার ডান দিকে তাকিয়ে দেখলো ধ্রুব তার পাশাপাশি হাঁটছে।তারা কিছু না বলে নিজের হাঁটার গতি বাড়ালো,তাতে ধ্রুবও তাল মিলালো তার মনে কৌতুহল।তারা এখানে কি করছে জানার আগ্ৰহ।তারা বিরক্তি নিয়ে হাটা থামিয়ে কোমরে হাত দিয়ে বললো।
“সমস্যা কি আমাকে ফলো করছেন কেনো।
ধ্রুবর ঠোটে শয়তানি হাসি,আর চোখে কৌতুহল সে তার চোখে চোখ রেখে বললো।
“এই সময় তুমি কোথায় যাচ্ছো,আর এখানে কেনো।
তারা বিরক্ত হলো,এতো কথা এই লোক কে কেনো সে বলবে।তাই সে বিরক্তি নিয়ে বললো।
“বয়ফ্রেন্ড খুজতেছি,খুঁজে দিবেন।
ধ্রুব নাক মুখ কুঁচকে বললো।
“ছিঃ তোমার মতো মেয়ের সাথে কে রিলেশন করবে।
তারা অযথা কথা না বলে আবার হাটা ধরলো।ধ্রুবও প্রশ্ন বৃদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তার সঙ্গে হাটা দিলো। ধ্রুব বিরক্তি নিয়ে বললো।
“কোথাৎ যাচ্ছো বললে না তো।
তারা হাঁটতে হাঁটতে,কাঠকাঠ গলায় বললো।
“মরতে যাচ্ছি আপনি যাবেন।
ধ্রুব তারা এমন কথায় প্রথমে বেভা-চেকা খেলেও,পরে মুহূর্তে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো।
“হ্যাঁ চলো।
তারা হাটা থামিয়ে ধ্রুবর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো।
“আপনার সমস্যা কি বিরক্ত করছেন কেনো।
ধ্রুবও হাটা থামিয়ে তারার চোখের চোখ রেখে বললো।
“তোমাকে বিরক্ত করা আমার কাজ,বাই দা ওয়ে তুমি এখন কোথায় যাচ্ছো বললে বিরক্ত করবো না।
“বাসা খুঁজছি আর কিছু।
ধ্রুব চোখ ছোটো ছোটো করে বললো।
“বাসা দিয়ে কি করবে।
তারা বিরক্ত হয়ে বললো।
“বিয়ে করবো,আপনার কোনো সমস্যা।
“আরে ত্যারামি করেন কেন।
“আপনি উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করেন কেন।
“আচ্ছা আমার ভুল হয়েছে এখন বলো
বাসা দিয়ে কি করবে।
“থাকবো আর কি।
“এখন যে বাসায় থাকো ওইটাই কি হয়েছে।
“ওই বাসা যৌতুকে শশুরবাড়ি দিয়ে দিছি।
“আল্লাহ সোজা ভাবে বলো না।
“ওই বাসা ছেড়ে দিছি,তাই নতুন বাসা খুঁজছি।
“ওও আগে বললে তো হতো।
“আপনি আমাকে বলতে দিছেন।
“আমার ভুল চলো।
তারা চোখ ছোটো ছোটো করে বললো।
“আপনার কাহিনি কি বলেন তো,আজকে ঝগড়া
করছেন না।আর সব কিছু স্বীকার করছেন।
ধ্রুব রহস্যময় একটা হাসি দিলো।তারপর তারার দিকে তাকিয়ে বললো।
“এতো কিছু জানতে হবে না,চলো তো।
বলেই সামনে হাটা দিলো,তারা পিছন থেকে চিৎকার করে তাকে ডাকতে ডাকতে তার সাথে যেতে লাগলো।
{পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করবেন}