Close

খাদ্যে উপস্থিত পুষ্টি উপাদানের সর্বোচ্চটা পেতে করণীয় কি?

people eating food

people eating food

আমরা খাবার খাই আমাদের ক্ষুধা নিবারন সহ শরীরে পুষ্টি উপাদানের সরবরাহের জন্য যা আমাদের শরীরের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধি সাধন, শক্তির সরবরাহ, রোগ প্রোতিরোধ ক্ষমতা তৈরি ও অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ পরিচালনার রসদ। কিন্তু খাবার উতপাদন পরবর্তি বিভিন্ন ধাপ পার হয়ে আমাদের খাবার প্লেটে আসার বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় পুষ্টি উপাদানের অপচয় হতে পারে বা পুষ্টি উপাদানগুল আমাদের শরীরে ব্যাবহারযোগ্যতা হারাতে পারে। ফলে খাবারে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানের অনেকটাই আমরা পাই না।

Getting highest nutrient out of your meal

কি কারনে খাবারে বিদ্যমান পুষ্টিউপাদান তার ব্যাবহারযগ্যতা হারায় এবং কি পন্থা অবলম্বন করে পুষ্টি উপাদানের এই অপচয় রোধ করে আমাদের খাদ্যে বিদ্যমান পষ্টিউপাদানের সর্বোচ্চটা আমরা পেতে পারি, সে বিষয়ে আমাদের করনীয় নিয়ে আজকের আলোচনা।

ছোট এবং সহজ কিছু টিপস নিম্নে উল্লেখ করা হল:

১। সঠিক রন্ধন পদ্ধতিঃ

সকল সবজি ও ফলের ক্ষেত্রে কাঁচা খাওয়ার চেয়ে রান্না করে খাওয়ায় ভিটামিন ও মিনারেল অপচয় হয়। বিশেষ করে ভিটামিন-বি ও সি এর অপচয় হয় সবচাইতে বেশি। তাই ভিটামিন-বি ও সি জাতীয় খাদ্য যথা সম্ভব কাঁচা খাওয়াই শ্রেয়। অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলসও রান্নার সময় লীচিং প্রক্রিয়ায় অপচয় হয়। এই অপচয় রোধে সবজিকে স্টীম করে রান্না করা যেতে পারে, এতে পুষ্টি উপাদানের অপচয় সর্বাপেক্ষা কম হয়। এছাড়াও কোন কিছু ভাজার ক্ষেত্রে ডুবো তেলে ভাজার চেয়ে স্টার ফ্রাই বা অল্প তেলে নেড়েচেড়ে ভাজা অধিকতর নিরাপদ, কারণ এতে কম হীটে রান্না হয় ফলে পুষ্টি উপাদানের অপচয় কম হয়।

Healthy cooking

২। বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবারকে ভিজিয়ে রেখে অঙ্কুরিত করাঃ

বাদাম বা বীজ জাতীয় খাবারগুলো আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় নানরকমের পুষ্টিগুণে ভরপূর। সেলেনিয়াম, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রন এর ভালো উৎস এই বীজ জাতীয় খাবারগুলোতে ফাইটিক এসিড নামক একধরনের উপাদানও থাকে যা এই মিনারেল ও ভিটামিনগুলোকে আমাদের শরীরে শোষিত হতে বাধা দেয়। ফাইটিক এসিডের কার্যক্ষমতাকে নিষ্ক্রিয় করতে বাদাম ও বীজ জাতীয় খবারগুলকে খাওয়ার আগে কয়েক ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে এর পর শুকিয়ে নিয়ে খাওয়া যেতে পারে। শস্য ও ডাল জাতীয় খাবার পানিতে ভিজিয়ে অঙ্কুরিত করে খেলে এতে বিদ্যমান এন্টিঅক্সিডেন্ট, এমাইনো-এসিড, ও বি-ভিটামিনের গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।

৩। ফল ও সবজি খোসা সহ খাওয়াঃ

কিছু ফল ও সবজির খোসা পাতলা হয় এবং এই ফল ও সবজিগুলোকে খোসা সহই খাওয়া যায়। যেমন- আলু, গাজর, শশা, আপেল, নাশপাতি, জুকিনি, বেগুন ইত্যাদি। এদের পুষ্টিগুনের অধিকাংশই এদের খোসা বা খোসার নিচে থাকে বিধায় খোসা ফেলে দিলে অধিকাংশ পুষ্টিই অপচয় হয়। তাই এসকল ফল ও সবজি ভালোভাবে ধুয়ে নিইয়ে খোসা সহই খাওয়া উত্তম।

৪। সাস্থ্যসম্মত তৈল জাতীয় খাবার খাওয়াঃ

কিছু চর্বিতে দ্রবণীয়  ভিটামিন আছে, যা আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় যেমন- ভিটামিন-এ, ডি, ই ও কে। এসকল ভিটামিনের সর্বাধিক শোষণ ও ব্যবহারযোগ্যতার জন্য এই ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারগুলো তেল বা চর্বি জাতীয় খাবারের সাথে খেতে বলা হয়। কিন্তু সেই তেল হতে হবে সাস্থ্যসম্মত। সাস্থ্যকর তেলের উৎস হিসেবে বাদাম, বাদাম তেল, জলপাই তেল, মাছের তেল, ডিমের কুসুম উল্লেখযোগ্য।

healthy fat

৫। সতেজ ফল ও সবজিঃ

ফল ও সবজির ক্ষেত্রে সতেজ অবস্থায় সর্বাধিক পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে। যদিও শহরাঞ্চলে ফল-সবজি সরবরাহের জন্য বিভিন্ন সংরক্ষণ পদ্ধতি অবলম্বন করতেই হয়। এই প্রসেসড ফল ও সবজির পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ তাজা ফল ও সবজির চেয়ে কম হয়। তাই যাথাসম্ভব সিজনাল ফল ও সবজি তাজা খাওয়ায় সচেষ্ট হতে হবে। সেক্ষেত্রে ছাদ বাগান করে সেখানে সিজনের ফল ও সবজি করা যেতে পারে।

৬। সঠিক খাদ্য সমন্বয় করাঃ

কিছু পুষ্টি উপাদানের মিথষ্ক্রিয়ায় একটি আরেকটি উপাদানের শোষণে বাধা হয়ে দাড়ায়,এর মাঝে উল্লাখযোগ্য হল- ক্যালসিয়াম-আয়রন/জিঙ্ক/ম্যাগনেসিয়াম। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন-দুধ বা দুধ জাতীয় খাদ্যকে আয়রন-জিঙ্ক-ম্যাগনেসিয়াম সমৃধ খাদ্য যেমন-মাংস, ডিম, সবজি এর সাথে মিক্স করে খেলে পুষ্টিউপাদানের অপচয় ঘটে।

আবার, কিছু পুষ্টি উপাদান একটি আরেকোটির শোষণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে যেমন- আয়রন-ভিটামিন সি। আয়রন সমৃধ খাবার যেমন- মাংস, কলিজা, ডিম, বাদাম কে ভিটামিন-সি সমৃধ খাদ্য যেমন- লেবু, টক ফল, টমেটো এর সাথে খেলে উভয়েরই পুষ্টি উপাদানের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।

তাই খাদ্য সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বিচক্ষণ হতে হবে।

৭। ভালো রুপে চিবিয়ে খাওয়াঃ

খাদ্য পরিপাকের প্রক্রিয়া শুরু হয় মুখগহব্বর থেকেই। খাবার চিবানোর মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য ছোট ছোট অংশে বিভক্ত হয় এবং মুখে অবস্থিত লালাগ্রন্থির সাথে মিশ্রিত হয়ে নরম ও হজমে সুবিধাজনক অবস্থায় আসে। এ সময়েই খাবারের পরিপাকের প্রয়োজনীয় পাচকরসঃ পাকস্থলী ও অন্ত্রে নিঃসরণ শুরু হয় যা পরবর্তি পর্যায়ের পরিপাক ক্রিয়াকে সহজ করে এবং এর পুষ্টিউপাদানের শোষণে সহায়তা করে। সুষ্ঠ পরিপাক না হলে পুষ্টিউপাদানের শোষণ ও সঠিকরুপে হয় না। তাই খাদ্য যথাসম্ভব উত্তমরুপে চিবিয়ে খাওয়া বাঞ্ছনীয়।

৮। অন্ত্রের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণঃ

অন্ত্রের স্বাস্থের উপরে খাদ্যের পুষ্টি উপাদানের পর্যাপ্ত গ্রহণযোগ্যতা নির্ভরশীল। অন্ত্র ভালো না থাকলে খাদ্যে অবস্থিত পুষ্টিউপাদান সঠিকরুপে শোষিত হয় না। তাই অন্ত্রের যত্ন নিতে হবে এবং এর জন্য খাদ্যে পর্যাপ্ত গাটফ্রেন্ডলি ব্যাক্টেরিয়া বা প্রোবায়টিকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। অন্ত্রের রোগ প্রতিহত করতে উচ্চ প্রক্রিয়াজাত খাদ্য বর্জন ও খাদ্য গ্রহনে সময়ানুবর্তি হওয়াও গুরুত্তপূর্ণ।

সব শেষে একটি কথা না বললেই নয়। খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করণের যেসকল পদ্ধতিতে খাদ্য অতি উচ্চ তাপ, আলো ও অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসে, সেসকল পদ্ধতিতে খাদ্যে বিদ্যমান পুষ্টিউপাদানের বিনাশ ঘটে বা পুষ্টি উপাদান তার গ্রহণযোগ্যতা হারায়। তাই এধরনের প্রক্রিয়াজাতক্রিত খাদ্য এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। সর্বাপেক্ষা গ্রহনযোগ্য হল তাজা খাবার গ্রহণ করা। যে মাটিতে ফল ও সবজি চাষ হচ্ছে তার রক্ষণাবেক্ষণও কম গুরুত্তপূর্ণ নয়। খাদ্যে বিদ্যমান পুষ্টিউপাদানের ধরণ মাথায় রেখে তার প্রক্রিয়াজাত করণ ও সংরক্ষণের ধরণ নির্ধারন করা জরুরী।

সানজিদা শারমীন

সিনিয়র ক্লিনিকাল ডায়েটিশিয়ান

ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার

উত্তরা, সেন্টার-১

www.facebook.com/DieticianSanzida/

Senior Clinical Dietician Labaid Diagnostic Center, Uttara-1 Ex-United Hospital Limited.

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Leave a comment
scroll to top