নিভে আসে চোখের আলো,
কাপড়ের দেয়ালগুলো যেন পাথরের মত থেমে আছে
মেশিনের শব্দে মূহুর্তে জাগে প্রাণের মায়া
নীরব ঘর জুড়ে বেদনার সুর বাজে,
বুকে জমে থাকা হাজারো স্মৃতি হাহাকার করে ওঠে।
শুয়ে আছি আমি নিস্তব্ধ, মাংসপিণ্ড, অসহায়
দেহ আমার শক্তিহীন,
মৃদু প্রাণস্পন্দন যেন বাঁচার করুণ আকুতি জানান দেয়
প্রতিটা নিঃশ্বাস যেন একেকটা যুদ্ধ,
বাতাস আজ বড্ড ভারী, বয়ে বেড়ায় মৃত্যুর গন্ধ।
এই বুঝি মৃত্যদূত এসে বলে চলে আয় বাছা
চোখের কোণে জল জমে, হয়তো শেষ দেখা
স্রষ্টাই জানেন কি আছে অদৃষ্টে লেখা
জীবন যেন পাতার নড়ন, বাতাসে দুলে,
কখনো আশার হাসি, কখনো নিরাশার বাণী
স্বপ্নের চাদর মেলে ডাকে কেউ দূর থেকে,
আর কেউ বলে “থাকো, তোমায় দরকার আমাদের সাথে।”
কেটে যায় নিঃসঙ্গতায় অনন্ত কাল
হৃদস্পন্দন চলছে থেমে থেমে জীবন আজ অনিশ্চিত
মনে শংকা ভোর হবে কি? উঠবে কি সূর্য আবার?
কাটবে কি আঁধার? দুচোখ কি আবার দেখতে পাবে সেই মায়াভরা মুখ খানি
আইসিইউ এর বাইরে বসা আমার জীবন সঙ্গিনীর?
কি আকুতি তার আমায় ফিরে পাবার
আর আমার বুক ফেটে যায় হাজারো না বলা কথায়
অপ্রকাশিত অনুভুতির জমাট বাঁধা ব্যথায়।
নাকি নিভে যাবে মোমবাতির শিখা?
অস্তমিত হবে শেষ সুর্য, ডুবে যাবে পৃথিবী অন্ধকারে
মুছে যাবে জীবনের খাতা থেকে আরেকটি নাম
আরেকটি দেহ মিশে যাবে মাটিতে।
সহসাই জিতে যায় স্রষ্টার দয়া
হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায় কেঁপে ওঠে দেহখানি
আবারো কানে বাজে মেশিনের বিপ বিপ শব্দ
ডাক্তার নার্সদের নড়াচড়া দেখছি আবছা
দুচোখ খুঁজে ফেরে সেই মলিন মুখখানি দেখার আশায়
অবশেষে সে আসে ক্লান্ত, শ্রান্ত, বিধ্বস্ত হাসিমাখা মুখে
হাতে তার আমার সেই মোটা চশমা
চোখে বিশ্বজয়ের গল্প
আহা আইসিইউ এর বিছানা
কত কষ্ট কত বেদনা যে থাকে সে ছাড়া আর কেউ জানেনা।