জেরিন জাহান দিশা
মারুফ বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান (গভীর প্রেম) । তিন বছর ধরে সে আমেরিকায় বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করছে। তার বাবা একজন সম্মানিত ব্যবসায়ী, দীর্ঘদিন ধরে হার্টের সমস্যায় ভুগছেন। হঠাৎ একদিন মারুফের মায়ের ফোন আসে—বলে, “বাবার অবস্থা ভালো না, যত তাড়াতাড়ি পারো, ঢাকায় চলে এসো।”
চিন্তায় পড়ে যায় মারুফ। ঢাকার ব্যবসা দেখাশোনা করতেন এক বিশ্বস্ত ম্যানেজার। এখন তার বয়স হয়েছে, সবকিছু সামলানো তার পক্ষে কঠিন। তাই তিনি নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছেন। মারুফ আমেরিকার দায়িত্ব একজন ম্যানেজারকে দিয়ে নিজে চলে আসে ঢাকায়।
ঢাকায় পৌঁছে সোজা হাসপাতালে যায় বাবাকে দেখতে। ডাক্তার জানায়, এখন অনেকটাই স্থিতিশীল, তবে যেকোনো উত্তেজনায় সমস্যা হতে পারে। বিকেলে মারুফ বাবাকে বাড়ি নিয়ে আসে। ওষুধ খাওয়ায়, খোঁজখবর নেয়। বাবা বলেন, “মারুফ, ঢাকার ব্যবসার দায়িত্ব এখন তোমার। ম্যানেজার সাহেবের মেয়ে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে, আমি চাই তুমি ওকে পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিযুক্ত করো। ওদের পরিবারকে সাহায্য করাটা আমার দায়িত্ব।”
মারুফ রাজি হয়ে যায়। ম্যানেজার সাহেবের মেয়ে কুসুম কাগজপত্র নিয়ে অফিসে আসে। দরজায় নক করে বলে, “May I come in?”
মারুফ বলে, “Yes, come in.”
কুসুমকে দেখে প্রথম দেখাতেই মুগ্ধ হয়ে যায় মারুফ। মারুফ ভাবে, “এ মেয়েটা এতটা শান্ত, এতটা মাধুর্যময়!”
কুসুমের সার্টিফিকেট দেখে, মেয়েটির ব্যবহার দেখে সিদ্ধান্ত নেয়—আজ থেকেই তার চাকরি শুরু। এরপর ম্যানেজার পদে আরও কিছু প্রার্থী আসে, তাদের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেয়।
দুজনের অফিসে দেখা-সাক্ষাৎ, কাজের ফাঁকে ছোট ছোট কথা, মাঝে মাঝে রেস্টুরেন্টে খাওয়া—সব মিলিয়ে কুসুমও ধীরে ধীরে অনুভব করে, মারুফ তার জীবনে কিছু আলাদা। কিন্তু সে নিজে থেকে কিছু বলে না।
একদিন মারুফ সাহস করে বলে, “কুসুম, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার হাসি, তোমার চোখ, তোমার শান্ত মুখ—সবকিছু আমার খুব আপন মনে হয়। তুমি যদি পাশে না থাকো, আমি যেন কিছুতেই নিজেকে সামলে রাখতে পারি না।”
কুসুম কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, “স্যার, আমি আপনার ভালোবাসা গ্রহণ করতে পারব না। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করুন।”
চমকে ওঠে মারুফ, “আমার কী দোষ কুসুম? আমি কি কোথাও তোমাকে অপমান করেছি?”
কুসুম কাঁদতে কাঁদতে বলে, “স্যার, আমার বাবা তো আপনার অফিসের সামান্য একজন ম্যানেজার। আপনি বড়লোক ঘরের ছেলে, আর আমি একজন সাধারণ মধ্যবিত্ত মেয়ে। আমাদের এই সম্পর্ক মানাবে না। আমি চাই না, আমি হীরার মতো আপনাকে ছুঁয়ে আবার নিজেই ভেঙে পড়ি।”
মারুফ বলে, “ভালোবাসা কি কখনো ধনী-গরিব দেখে হয়? আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমার অবস্থান নয়। আমার কাছে শুধু তুমি, কুসুম।”
কুসুম চোখের জল মুছে বলে, “স্যার, আপনি আবেগে ভেসে যাচ্ছেন। বাস্তব অনেক কঠিন। দয়া করে অফিসে ফিরে চলুন।”
মারুফ থেমে যায়। একটু পর বলে, “যদি তুমি না চাও, আমি আর এখানে থাকবো না। আজ অফিস থেকে বাড়ি যাবো, কালই আমেরিকার ফ্লাইট ধরবো। তোমার ভালোবাসার দরকার যদি আমার থাকে, তবে আমি থাকি। না হলে… বিদায়।”
পরদিন মারুফ সব কাজ ম্যানেজারকে বুঝিয়ে দিয়ে বলেন, “আমি যাচ্ছি। হয়তো আর দেখা হবে না।”
কুসুম কিছু বলতে পারে না, শুধু চোখ দিয়ে জল পড়ে।
বাড়িতে ফিরে মারুফ সব খুলে বলে। তার মা শুনে বলে, “তুই একবার কুসুমকে নিয়ে আয়, আমি ওর সঙ্গে কথা বলতে চাই।”
পরদিন কুসুম আর তার বাবাকে ডেকে পাঠান মারুফের মা।
মারুফের মা কুসুমের হাত ধরে বলেন, “মা, ভালোবাসা টাকা দেখে হয় না। তুই যদি আমার ছেলেকে ভালোবাসিস, তবে আর চিন্তা কিসের?”
কুসুম চোখ মুছে কাঁপা গলায় বলে, “আমি মারুফকে ভালোবাসি খালা… মানে মা।”
পেছন থেকে মারুফ এগিয়ে এসে বলে, “তবে আজ থেকে তুমি শুধু আমার PA না, আমার জীবনসঙ্গী।”
কুসুম হেসে উঠে বলে, “স্যার, আজ থেকে আপনি আমার বস না—আমার ভালোবাসা।”
সুন্দর গল্প