Close

বিশ্ব

লেখিকা: জেরিন জাহান দিশা


আমরা যে গ্রহে বাস করি, তার নাম পৃথিবী। এই পৃথিবী কিন্তু সারা বিশ্বের একটি ছোট্ট অংশ মাত্র। পুরো বিশ্ব বলতে বোঝায় গোটা মহাবিশ্বকে। এটি অনেক বড়, যার কোনো শেষ এখনও মানুষ জানে না। বিশ্বে আছে কোটি কোটি গ্রহ, তারকা, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি, ধূমকেতু এবং অনেক কিছু। এই সবকিছু একসাথে মিলে তৈরি করেছে এই রহস্যময় বিশ্ব।

বিশ্বের কোনো শুরু কোথা থেকে হয়েছিল, সেটা বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরে জানার চেষ্টা করে আসছেন। অনেকে বলেন, “বিগ ব্যাং” নামে একটি বিস্ফোরণ থেকে এই বিশ্ব তৈরি হয়েছিল প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে। তখন একটি ছোট বিন্দু থেকে হঠাৎ করে বড় বিস্ফোরণ হয় এবং সেই থেকে শুরু হয় সময়, স্থান এবং সবকিছু। তারপর ধীরে ধীরে গঠিত হয় গ্যালাক্সি, নক্ষত্র ও গ্রহপুঞ্জ।

বিশ্ব মানে শুধু পৃথিবী নয়। এটি একটি অজস্র গ্রহ ও নক্ষত্রের সমষ্টি। আমরা যে সূর্যটিকে দেখি, সেটিও একটি তারকা। আর এমন তারকার সংখ্যা বিশ্বে কোটি কোটি। আমাদের গ্যালাক্সির নাম মিল্কিওয়ে। এই গ্যালাক্সিতেই আছে আমাদের পৃথিবী। এর বাইরেও আরও অনেক গ্যালাক্সি রয়েছে, যেমন: অ্যান্ড্রোমিডা, সেন্টরাস ইত্যাদি।

বিশ্ব শুধু পদার্থ বা বস্তু দিয়েই গঠিত নয়, এখানে রয়েছে মহাশূন্য, সময় ও মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। পৃথিবী যেমন সূর্যকে ঘিরে ঘোরে, তেমনি সব গ্রহ তাদের তারকাকে ঘিরে ঘোরে। এই নিয়মেই চলছে গোটা বিশ্ব।

বিশ্বের নিয়ম-কানুন খুব সুন্দরভাবে কাজ করে। প্রতিটি বস্তু পরস্পরের সাথে একধরনের সম্পর্ক বজায় রাখে। যেমন ধরুন, যদি পৃথিবী সূর্য থেকে একটু বেশি দূরে থাকত, তাহলে ঠান্ডায় জমে যেত। আবার একটু কাছে থাকলে পুড়ে যেত। এই সবকিছুই এমনভাবে তৈরি হয়েছে যেন জীবন থাকতে পারে।

মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্ব সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে আসছে। প্রাচীন যুগে মানুষ চাঁদ-সূর্য দেখে সময় হিসেব করত। এরপর টেলিস্কোপ আবিষ্কার হলে মানুষ দূরের নক্ষত্র দেখতে শিখল। এখন মানুষ রকেট পাঠিয়ে মহাকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। চাঁদে মানুষের পা পড়েছে, মঙ্গল গ্রহে যান পাঠানো হয়েছে, এমনকি দূরবর্তী গ্রহে জীবনের খোঁজ চলছে।

বিশ্বের মাঝে অনেক রহস্য এখনো অজানা। যেমন, ব্ল্যাক হোল কীভাবে কাজ করে? অন্য কোনো গ্রহে কি প্রাণ আছে? সময় ভ্রমণ কি সম্ভব? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে বিজ্ঞানীরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

আমরা যেহেতু এই বিশাল বিশ্বে একটি ছোট্ট গ্রহের বাসিন্দা, তাই আমাদের দায়িত্ব পৃথিবীকে রক্ষা করা। কারণ, এই বিশ্বে এখনো পর্যন্ত একমাত্র পৃথিবীতেই প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তাই আমাদের প্রকৃতি, বায়ু, পানি এবং জীবজন্তুদের সংরক্ষণ করতে হবে।

বিশ্ব একটি বিস্ময়কর সৃষ্টি। এর প্রতিটি অংশ আমাদের ভাবিয়ে তোলে। আমরা যত জানছি, ততই নতুন প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছি। এই বিশ্ব জানার কোনো শেষ নেই। প্রতিটি মানুষ যেন এই বিস্ময়কর বিশ্বকে জানে, বুঝে এবং ভালোবাসে — এটাই হওয়া উচিত আমাদের চাওয়া।

প্রাণীজগৎ, উদ্ভিদজগৎ-সব‌ই এই বিশ্বের অংশ। প্রকৃতি আমাদের শেখায় ধৈর্য,স্থিতি,ও নীরবতা। কিন্তু মানুষ এই প্রকৃতিকে ক্ষতবিক্ষত করেছে বহুবার। বন কাটা হয়েছে,নদী দূষিত হয়েছে,বায়ু বিষাক্ত হয়েছে।নদী, পাহাড়,সাগর সব‌ই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চিহ্ন।
আমাদের মন আছে,তাই আমরা সৃষ্টি করতে পারি। সাহিত্য, চিত্রকলা -সব‌ই বিশ্বকে নতুনভাবে
দেখার এক উপায়।কবির চোখে এই বিশ্ব এক প্রেমিক, চিত্রশিল্পীর তুলিতে এক রঙিন ক্যানভাস।
শিশুর চোখে এই বিশ্ব এক খেলার মাঠ। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটি এক গতিশীল শক্তি -সংস্থান। আর
দর্শনের চোখে -এটি এক আত্মসন্ধানের চক্র।
ধর্ম ও জাতির বিভাজন আমাদের দূরে সরিয়ে দেয়। কিন্তু বিশ্ব চায় ঐক্য, ভালোবাসা, সহমর্মিতা। যুদ্ধ কখনো সমাধান নয়। শান্তি, সংলাপ,ও শিক্ষা -এই তিনে গড়ে উঠতে পারে একটি সুন্দর বিশ্ব। আমরা যদি একে অপরের কথা শুনি,তাহলে ভুল বোঝাবুঝি কমবে।
মাটির ঘ্রাণ, বৃষ্টির শব্দ, ভোরের আলো-এস‌ব‌ই জীবনের সৌন্দর্য। কিন্তু প্রযুক্তির দাপটে আমরা এসব থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। স্মার্টফোন, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা,রোবট -সব‌ই উন্নয়নের চিহ্ন। কিন্তু এগুলোর মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে মানবিকতা।তাই
দরকার ভারসাম্য -উন্নয়ন আর অনুভবের মিলন সক্রেটিস থেকে বুদ্ধ, রাসুল থেকে রবীন্দ্রনাথ -তারা সবাই বিশ্লেষণ করেছেন এই জীবন।”আমি কে?”,কেন এসেছি?”-এই প্রশ্নগুলোই মানুষের পথ দেখিয়েছে। এই বিশ্ব আমাদের কাছে শুধু পদার্থ নয়, অনুভূতির ক্ষেত্রে।আমরা ভালোবাসি, ঘৃনা করি,হাসি-সব‌ই এই জগতের।‌ এই বিশ্ব চায় মানবিকতা ,চায় শান্তি,চায় প্রেম।আমরা সবাই এক‌ই আকাশের নিচে বেঁচে আছি।
আমরা যদি একে অপরকে সম্মান করি, সহানুভূতি দেখাই-তবে পৃথিবী এক অন্যন্য সৌন্দর্য হয়ে উঠবে। প্রতিটি ঘ্রাণ,প্রতিটি নিঃশ্বাস প্রতিটি অনুভব -এই বিশ্বকে পূর্ণতা দেই।

নাম: মোছাঃ শিরিনা খাতুন সম্পর্ক:মাতা গ্রাম: বড়বাড়ীয়া পুরাতন হাট পাড়া থানা: মিরপুর জেলা: কুষ্টিয়া মোবাইল:01743281966

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Leave a comment
scroll to top