ছাদ কৃষিতে এক যুগান্তরকারী উদ্ভাবন




সংজ্ঞা:শেকড়ের বিন্যাস ও গঠন অনুযায়ী মাটি,পানি,খাবার(সার)বায়ু,আলো এবং এর সঠিক ব্যবহারের নাম-ই হলো শেকড় প্রযুক্তি।এই প্রযুক্তিতে বেড সিস্টেমে ফসল রোপন বা বোপনকরা হয়। টব বা ড্রাম সিস্টেমে ফলন ভালো হয় না।তাই মাটির স্তর পাতলা করে বেডের উপর বিছিয়ে দিতে হয় এবং মাটির সাথে পরিমিত সকল খাদ্যপ্রাণ(সার) মেশাতে হয়।পরিমিত সেচ ও আলোর ব্যবস্থা করতে পারলেই প্রচুর ফলন হয়। গবেষণায় দেখা গেছে শতক প্রতি ফলন মাটির চেয়ে বেশি।
সাধারণ নিয়ম:
১) টবে বা ড্রামে গাছ রোপন করা যাবে না
২) বেড পদ্ধতিতে সবজি বা ফলের চারা রোপন করতে হবে।
৩) মাটিতে সকল প্রকার খাবার মিশিয়ে মিডিয়া তৈরি করতে হবে।
৪) নিয়মিত সেচ দিতে হবে ।
৫. যে গাছ যে পরিবেশ পছন্দ করে সেই পরিবেশ দিতে হবে।
৫) প্রত্যেক গাছের শেকড়ের বিন্যাস জানতে হবে।
শেকড় প্রযুক্তি(রুট টেকনোলোজি) এর প্রয়োগ
ছাদে লাভজনক খামার গড়ে তোলা যাবে ।
পানিতে চাষ সম্ভব হবে ।
পতিত জমি চাষের আওতায় আসবে।
সবজি,পেয়াজ,মরিচ ও অন্যান্য ফসলের দাম কমে আসবে।
বর্তমানে সকল নার্সারি গড়ে উঠছে শেকড় প্রযুক্তি অনুসারে।
অনুর্বর জমি –উর্বর জমিতে রুপান্তর করা যাবে।
মাটি ক্ষয় রোধ এবং ভাঙ্গন প্রতিরোধে এই প্রযুক্তি কার্যকর।
ছাদ শীতল রাখা যাবে।
পারিবারিক পুষ্টি নিশ্চিত হবে।
কোন জমি পতিত থাকবে না।
১.শেকড়ের বিন্যাস

গাছের শেকড় মূলত দুই প্রকার। ক) পার্শ্ব শেকড় খ) মূল
চারা রোপন বা বীজ বোপনের সময় গাছের শেকড়ের বিন্যাস অনুয়ায়ী রোপন করতে হয়।কারণখাদ্য গ্রহণের শেকড়গুলো মাটির অগভীর অঞ্চল হতে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে।কিছু কিছু গাছের শেকড় মাটির অগভীর অঞ্চল দিয়ে বহুদূর পর্যন্ত অগ্রসর হয় যেমন লাউ, কুমড়া,করলা,ঝিংড়া,চিচিংগা সহ সকল লতানো জাতীয় সবজি। এদেরকে যদি ১৬ ইঞ্চি গভীরের ড্রামে দেয়া হয় তাহলে ফলন ভালো হবে না।কারণ অনেক গভীর হতে এরা খাদ্য গ্হণ করতে পারে না। আবার কিছু কিছু সবজি ও মসলা আছে যাদের শেকড় মাত্র ২-৩ ইঞ্চি গভীরে প্রবেশ করে যেমন পেঁয়াজ,রসুন,সকল প্রকার শাক।এদেরকে অনেক বড় ড্রামে বা টবে দেয়া কোন যৌক্তিকতা নাই।আবার ফল গাছের খাবার গ্রহণের শেকড় মাত্র ৪-৮ ইঞ্চি এর মধ্য থাকে
ক) মাটির ব্যবহার: মৃত্তিকা বা মাটি হলো পৃথিবীর উপরিভাগের নরম ও দানাদার আবরণ এবং একটি প্রাকৃতিক মাধ্যম যা অন্যান্য সমস্ত উপকরণ এবং জীবিত সত্ত্বার ভিত্তি হিসাবে কাজ করে
কঠিন, তরল ও বায়ুবীয় (৩ টি ) পদার্থ মৃত্তিকার এক একটি উপাদান হিসেবে পরিগণিত। কঠিন পদার্থ দুই প্রকার- অজৈব ও জৈব পদার্থ হওয়ায় এ চারটি উপাদানের ( অজৈব পদার্থ, জৈব পদার্থ, পানি, বায়ু ) সম্মিলিত রূপই হল মৃত্তিকা।
যথা –
১. অজৈব পদার্থ – ৪৫% ২. জৈব পদার্থ – ০৫% ৩. পানি – ২৫%
৪. বায়ু – ২৫
মৃত্তিকা মূলত ৩ প্রকার। যথা
(১) বেলে মৃত্তিকা(২) দোআঁশ মৃত্তিকা (৩)এঁটেল মৃত্তিকা।
আন্তর্জাতিক ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় পদ্ধতিতেই মৃত্তিকার একক কণার আকারের ভিত্তিতে মৃত্তিকাকে ১২ ( বার ) টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়, যথাঃ
১.বেলে মৃত্তিকা ( Sandy soil )
২.দোআঁশ বেলে মৃত্তিকা ( Loamy sandy soil )
৩.বেলে দোআঁশ মৃত্তিকা ( Sandy loamy soil )
৪.দোআঁশ মৃত্তিকা ( Loamy soil )
৫.পলি দোআঁশ মৃত্তিকা ( Silty loamy soil )
৬.পলি মৃত্তিকা ( Silty soil )
৭.বেলে এঁটেল দোআঁশ মৃত্তিকা ( Sandy clay loamy soil )
৮.পলি এঁটেল দোআঁশ মৃত্তিকা ( Silty clay loamy soil )
৯.এঁটেল দোআঁশ মৃত্তিকা ( Clay loamy soil )
১০.বেলে এঁটেল মৃত্তিকা ( Sandy clay soil )
১১.পলি এঁটেল মৃত্তিকা ( Silty clay soil )
১২. এঁটেল মৃত্তিকা ( Clay clay soil )
ছাদ বা উচু জায়গায় কেমন মাটি দরকার?

ছাদ কৃষিতে দোঁয়াশ মাটি দরকার।এঁটেল মাটিতে ছাধ কৃষি মোটেই ভালো হয় না।তবে ফলের চারা রোপন করলে সেখানে ৫০ % এঁটেল মাটি এবং ৫০ দোঁয়াশ মাটি লাগবে।সকল প্রকার পুষ্টিমাটিতে থাকতে হবে।মোট কথা ছাদ কৃষিতে ঝুরঝুরে মাটি লাগবে। যদি দোয়াশ মাটি না পাোয়া যায় তাহলে ৫০% এঁটেল মাটি ,২৫% বালু এবং ২৫% দোয়াশ মাটি এবং ফর্মূলা অনুয়ায়ী সার মিশিয়ে কৃষি মাটি তৈরি করুন।
ছাদ খামারের মাটি তৈরির ফর্মূলা
(শেকড় প্রযুক্তি(Root Technology) অনুসারে মাটি তৈরি)
(১) ষোল (১৬) বস্তা ঝুরঝুরে মাটি সংগ্রহ করুন ।
মাটির পরিমান: ২০ ঘন ফুট বা ১৬ বস্তা ,জায়গার পরিমান: ৬০ বর্গফুট (৫০টি মরিচ গাছ বা ৪০টি টমেটো/ফুল কপি/পাতা কপি বা ১৬টি লাঊ গাছ রোপন করা যাবে (১০ফুট লম্বা ৩ফুট চওড়া এবং মাটির গভীরতা ৪ ইঞ্চি)।এই রকম ২টি বেড হবে)


(২)মাটির সাথে ৬বস্তা পচা গোবর বা ৫০ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট এবং কেজি সরিষার খৈল মিশিয়ে প্রখর রোদ্রে ৩-৪ দিন ভালো ভাবে শুকিয়ে নিন।


(৩)মাটিতে ৮৪ গ্রাম ইউরিয়া,৮৪ গ্রাম টিএসপি,৮৪ গ্রাম এমওপি, ১২ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম(ম্যাগসার), ১০ গ্রাম সালফার ,৪ গ্রাম জিংক সাল,২ গ্রাম পেট্রো বোরন ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। (মাপনি হিসেবে চা চামচ ব্যবহার করতে পারেন। ( ১ চা চামচ= ৪ গ্রাম)

(৪) মাটিতে ২৫০ গ্রাম চুন বা ২ গ্রাম বায়ো ডার্মা মিশিয়ে ২ বালতি( ৩৬) লিটার পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিন। বস্তা বা খড় কুটা দিয়ে ৭ -১০ দিন ঢেকে রাখুন।


(৫) প্রস্তুত কৃত মাটি বেডে বা টবে বা ড্রামে ভরে জমি তৈরি করুন। এর পর সতেজ, স্বাস্ত্যবান ও রোগমুক্ত চারা রোপন বা বীজ বোপন করুন।


২. পানি ব্যবহার
পরিমতি পানি ব্যবহার করতে হবে. পানির অপচয় করা যাবে না। গরমের সময় প্রতিদিন সেচ দিতে হবে। আবার বেশ পানি সেচ দেয়া যাবে না। ঝরনা ব্যবহার করতে হবে।
৩.খাবার ব্যবহার(সার)

গাছ সাধারণত খাবার বা সার আয়ন হিসেবে গ্রহণ করে।
আর একটি সাধারণ নিয়ম হলো সমবায় ভিত্তিতে খাবার খেয়ে অর্থাৎ একে অপরের জায়গা থেকে বাধাহীনভাবে খাবার খেয়ে থাকে। কিন্ত আমরা যারা ছাদে টবে বা ড্রামে চাষ করি তখন বাধে বিপত্তি. পৃথিবীর সকল উদ্ভিদ এই নিয়ম মেনে চলে।
পরিমিত খাবার ব্যবহার করাই অতি জরুরি।
ক) সার ব্যবস্থাপনা ইউরিয়া
১)আপনার গাছ হলুদ হয়ে যাচ্ছে? বৃদ্ধি হচ্ছে না? ডালপালা কম?
ইউরিয়া সার প্রয়োগ করুন বা মুরগীর বিষ্টার সার প্রয়োগ করতে পারেন। ডিএপি সারও প্রয়োগ করতে পারে

খ) সার ব্যবস্থাপনা –টিএসপি
আপনার গাছে ফুল ফল হচ্ছে না?গাছ নরম? শক্ত করার দরকার? পাতা চিকুন? ফল ঝরে যাচ্ছে?
কোন চিন্তা নাই- টিএসপি( ট্রিপল সুপার ফসফেট) সার দিন। প্রতি বর্গ ফুটে ১.৪ গ্রাম। ১চা চামচের অর্ধেকের কম।
গ) সার ব্যবস্থাপনা এমওপি

আপনার গাছের পাতা পুড়ে যাবার মত হচ্ছে? তিলের দানার মত দাগ পড়েছে? রোগ ব্যাধি বা পোকা মাকড়ের আক্রমণ বেশি? যদি উত্তর হ্যা হয় তাহলে এমওপি( মিউরেট ও পটাশ) বা হাড়ের গুড়া / ভার্মি কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করুন।
ঘ) সার ব্যবস্থাপনা – সালফার
আপনার গাছের পাতা চিকুন হয়ে যাচ্ছে? ফল ঝরে যায়? পাতার কিনারা সাদা হয়? গাছ দুর্বল হয়? সালফার সার প্রয়োগ করুন। ১ গ্রাম / লিটার।
পুরাতন পাতায় মরিচার মত দাগ পড়ে? নতুন পাতার গোড়া ও মধ্যশিরার দুই কিনারা সবুজ হয়?
জিংক সার প্রয়োগ করুন। ১ গ্রাম/ প্রতি লিটারে।
চ) সার ব্যবস্থাপনা-বোরণ
ফল আঁকাবাকা হচ্ছে? অমসৃন ত্বক? ফল ঝরে যাচ্ছে?
কোন চিন্তা নাই- বোরণ প্রয়োগ করুন।