প্রথম দেখায় সে ছিল এক নিঃশব্দ সন্ধ্যার মতো—শান্ত, বিমর্ষ, অথচ অদ্ভুত রকম মোহময়। তার চোখে ছিল এক গোপন যুদ্ধের ক্লান্তি, আর হাঁটুর নিচে চাপা পড়ে থাকা আত্মার চিৎকার।
সে ছিল ভাঙা—অতীতের অজস্র ভুল, ক্ষত, আর মানুষদের ফেলে যাওয়া শব্দে জর্জরিত।
আর আমি?
আমি ছিলাম এক নির্মাণশিল্পী—যে ভেবেছিল, ভালোবাসার হাতুড়ি দিয়ে গড়ে তুলবে এক নতুন জীবন,
এক নতুন সে।
জানতাম তার ভুলগুলো, জানতাম সে কোথা থেকে এসেছে, কী কী পেরিয়ে এসেছে।
তবু তার দিকে হাত বাড়িয়েছিলাম।
আমি চাইনি শুধু তাকে ভালোবাসতে—আমি চেয়েছিলাম তাকে ভালো মানুষ বানাতে।
দিনের পর দিন, নিজেকে ভেঙে তার ভিতর ঢুকিয়েছি আলো হয়ে।
তার গা থেকে কাদা মুছে আমি তাকে দাঁড় করিয়েছি আকাশের নিচে।
তার দুঃস্বপ্নগুলোকে ঘুম পাড়িয়ে, চোখে স্বপ্ন বুনে দিয়েছিলাম।
আর অজান্তেই আমি তার মায়ায় জড়িয়ে গেছি—অভিনয় আর দায়িত্ব পেরিয়ে, সত্যিকারের ভালোবাসায়।
আমি তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম—
ছাদের নিচে একটা ছোট্ট সংসার,
রাত শেষে সকালের আলোয় জেগে ওঠা,
আর চায়ের কাপ হাতে একসাথে জীবন চেনা।
কিন্তু হঠাৎ একদিন, সব থেমে গেল।
কোনো শব্দ ছাড়াই সে হারিয়ে গেল।
একটা চিরকুটও নয়, না ছিল বিদায়ের শেষ আলিঙ্গন।
শুধু রেখে গেল শূন্যতা, আর অসংখ্য প্রশ্ন—
“আমি কি ভুল করেছিলাম?”
“ভালোবাসা কি তার কাছে অপরাধ ছিল?”
“সে কি কোনোদিন সত্যিই ভালোবেসেছিল আমায়?”
সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমি আজও খুঁজে বেড়াই—
আয়নায়, রাতের আকাশে, চোখের নিচে জমে থাকা ক্লান্তির রেখায়।
কিন্তু কোনো উত্তর মেলে না।
আজ আমি আর আগের আমি নেই।
ভালো মানুষ বানাতে গিয়ে আমি নিজেই বদলে গেছি।
এক সময় যে ভালোবাসার কবি ছিলাম,
সে আজ প্রশ্নের কাছে পরাজিত এক ধূলিধূসর ছায়া।
সে চলে গেছে।
শুধু থেকে গেছে কিছু অপূর্ণ স্বপ্ন, কিছু ব্যথা,
আর এক অসমাপ্ত প্রেমকাব্য—
যেটার প্রতিটি পঙ্ক্তিতে লেখা আছে আমার নিঃশব্দ কান্না।
