Close

আমার মায়ের ছায়া

জেরিন জাহান দিশা


আমার মায়ের নাম মিস সাহার বানু।নামটা উচ্চারণ করলেই মনে হয়-ভালোবাসা,ত্যাগ আর নির্ভরতার আরেক নাম যেন মা। ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত আমার প্রতিটা পদক্ষেপে যিনি ছায়ার মতো পাশে ছিলেন,তিনি আমার মা।যখন আমার বয়স
চার বছর ঠিক তখন থেকে আমার মায়ের কাছে আমার হাতেখড়ি।জন্মের পর আমি মায়ের বুকের দুধ ও খেতে পারিনি। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ছিলাম। অনেকেই বলেছিলো বাঁচানো যাবেনা। ডাক্তার পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু আমার মা হাল ছাড়েনি। অসুস্থ আমাকে কোলে নিয়ে ডাক্তারের কাছে ছোটাছুটি, সংসার সামলানো এবং নিজের একটা স্কুল
চালিয়েছে। নিজের খাওয়া,ঘুম বিশ্রাম -সব ভুলে শুধু আমাকে সুস্থ রাখার জন্য যুদ্ধ করেছেন। হয়তো সে সময় আমার কিছুই মনে ছিলনা, কিন্তু আজ বড় হয়ে যখন শুনি, তখন চোখের কোনে জল আসে।আমি যখন স্কুলে ভর্তি হলাম, তখন মা আমাকে সাথে নিয়ে স্কুলে নিয়ে যেতেন। ঠান্ডা হাওয়ার ভয়ে মোটা কাপড় জড়িয়ে দিতেন। ক্লাস না হ‌ওয়া পর্যন্ত
গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতেন, যেন কিছু না হয়ে যায়।মা কখনোই ক্লান্ত হননি আমার জন্য, বরং আমার প্রতিটি চাহিদায় নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন।আমি যখন প্রাইমারির
পড়া শেষ করলাম। ক্লাস সিক্সে উঠবো তখন আমার মা আমাকে সাথে নিয়ে খলিশাকুন্ডি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে নিয়ে যাই ভর্তি করাতে। ভর্তি শেষ হলে আমার সাথেই বাড়ি
ফিরে আসলাম। ক্লাস শুরু হলো ।যখন আমি
পড়তে বসতাম আমার মা আমার পাশে বসে
থাকতো রাত জেগে। আমার জন্য গরম দুধ নিয়ে আসতো যাতে আমি পড়তে পড়তে ক্লান্ত
না হয়ে যায়। যখন আমি পি .এস.সি জে .এস.সি পরীক্ষা দিলাম আমার মা পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতো।আর পরীক্ষা শেষ হলে আমি আমার
মায়ের হাত ধরে বাড়ি ফিরে আসতাম। ক্লাস নাইনে যখন পড়ি আমার মা। আমার পড়ার টেবিলে বসে থাকতো বিভিন্ন সাবজেক্টের এম.সি.কিউ এ সাহায্য করতো।আমি অঙ্কে
কাঁচা ছিলাম তাই আমার থেকে আমার মা বেশি চিন্তিত থাকতেন। মাধ্যমিক যখন মোটামুটি রেজাল্টে পাশ করলাম।তখন ইন্টারমিডিয়েট ভর্তি হলাম। আমার মাকে খলিশাকুন্ডি ডিগ্রী কলেজে নিয়ে গিয়েছিলাম
মা আমাকে ফর্ম পূরণ কিভাবে করতে হবে সেটা শিখাচ্ছিলেন।মা আমার সাথে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার সময় মিরপুর কলেজে গেছে।তারপর যখন কম্পিউটারে
ভর্তি হয় । কম্পিউটারের পরীক্ষা আরম্ভের
দিনটাই ও আমার পাশে থেকেছেন। আমাকে শক্তি যুগিয়েছেন।মা আমার সব কাজেই পাশে থেকে আমাকে সাহায্য করে গেছেন।
ভয় পেলে সান্তনা দিয়েছেন। মায়ের ভালোবাসা কখনোই শুধু যত্নে সীমাবদ্ধ ছিল -না তাঁর প্রতিটি কাজে ছিল আত্মত্যাগ, ছিল ছিল নিঃশব্দ এক সংগ্রাম ।বাবা চিকিৎসক তাই সবসময় আমার সাথে সঙ্গ দিতে পারেনি।তবে তিনিও আমার আরেক শক্তি।
মা মানে শুধু জন্মদাত্রী নন-মা মানে একজন যোদ্ধা, একজন বন্ধু, একজন শিক্ষক, একজন ছায়ার মতো অবিচল সঙ্গী।বিশ্বাসের
আরেকটা হাত।

নাম: মোছাঃ শিরিনা খাতুন সম্পর্ক:মাতা গ্রাম: বড়বাড়ীয়া পুরাতন হাট পাড়া থানা: মিরপুর জেলা: কুষ্টিয়া মোবাইল:01743281966

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Leave a comment
scroll to top