জেরিন জাহান দিশা
আমাদের সমাজে ধূমপান যেন এক সাধারণ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অনেক মানুষ আছে যারা সকালে ঘুম থেকে উঠে খাবার খাওয়ার আগেই সিগারেট হাতে নেয়। এমনকি তারা অসুস্থ হলেও ঔষধ খাওয়ার আগে সিগারেট বা বিড়ি খাওয়াকে প্রাধান্য দেয়। নিষেধ করা সত্ত্বেও, অনেকে একটার পর একটা সিগারেট ধরিয়ে যায়, যেন এটি জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ধূমপানের কারণে আজ বহু মানুষ ক্যান্সারসহ নানা প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অথচ প্রতিটি সিগারেটের প্যাকেটে বড় করে লেখা থাকে—“ধূমপান ক্যান্সারের কারণ”। তারপরও মানুষ সেই সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে চলেছে। সচেতনতা থাকা সত্ত্বেও তারা অভ্যাস পরিবর্তনে অনীহা দেখায়।
আসক্তি এমন একটি জিনিস, যা চাইলে ছাড়া সম্ভব, কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তি ও সঠিক দিকনির্দেশনা। অনেকেই ধূমপান ছেড়ে সুস্থ জীবন যাপন করছে—তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হওয়া দরকার।
সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, এখন কম বয়সী ছেলেমেয়েরাও ধূমপানের মতো খারাপ অভ্যাসে জড়িয়ে পড়ছে। ১৮ বছরের নিচেও অনেক ছেলেকে দেখা যায় সিগারেট হাতে। এমনকি মেয়েরাও আজকাল বিভিন্ন ধরনের নেশায় আসক্ত হচ্ছে, যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
🔻 আমাদের সবার দায়িত্ব এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা।
✅ পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজ একত্রে কাজ করলে ধূমপানের এই ভয়াবহ অভ্যাস থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
আজকাল সিগারেট খাওয়া কে অনেকেই যেন ফ্যাশান বা
আর্ট বলে মনে করে।
রাস্তায় চলতে চলতে সিগারেট টানা যেন সৌখিনতা এমনকি বয়স্ক মানুষ বা নারীদের পাশ দিয়ে যাবার সময়ও অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে ধোঁয়া ছাড়ে-এটা শিষ্টাচারবদ্ধ।
শুধু সিগারেটই সীমাবদ্ধ নয় আরো নানান ধরনের বিড়ি,হুকা । তরুণ -তরুণীদের মধ্যে এই
মরণনেশাগুলো ধীরে ধীরে সমাজের শিরা-উপশিরা গিলে
ফেলছে। স্কুল -কলেজ পড়ুয়া অনেক ভালো ছেলেমেয়ে ও
বন্ধুদের প্রলোভনে নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। একবার এই পথে
পড়লে ফিরে আসা বড়ো কষ্টকর।
বেদনাদায়ক বিষয় হলো, অনেক ধূমপায়ী নিজের অভ্যাসকে
যৌক্তিক করতে বলে-
👉”সিগারেট না খেলে মাথা গরম হয়ে যাই।
👉 মাথায় কোনো কাজ করেনা।
👉কেউ ভালো কথা বললেও তার সাথে খারাপ ব্যবহার করি।
👉 ধূমপান না করলে ঠিকমতো পায়খানা হয়না।
*এগুলো আসলে নেশার তৈরি মানসিক মোহ,যার পেছনে
কোনো বাস্তবতা নেই।
🌟এই নেশা ব্যক্তি নয়,সমাজ ধ্বংস করে।
🌟 আমাদের উচিত এই বিষাক্ত অভ্যাসের বিরুদ্ধে মুখ খোলা, সচেতনতা বাড়ানো এবং যারা আসক্ত তাদের পাশে
দাঁড়ানো।
🏵 আসুন বলি-“ফ্যাশান নয় ধূমপান ছেড়ে দেই সুস্থ সুন্দর
জিবন গড়ি।
ধোঁয়ার কুণ্ডলির মধ্যে কেউ কেউ খুঁজে বেড়ায় স্টাইল, কেউ ভাবে এটা নাকি আধুনিকতার প্রতীক। আজকাল অনেকেই সিগারেট খাওয়াকে ফ্যাশন বা আর্ট মনে করে। কানে সিগারেট গুঁজে রাখাকে স্টাইল ভাবা হয়, আবার রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ধোঁয়া ছাড়াকে মনে করা হয় সৌখিনতা!
কিন্তু সত্যি বলতে, এই অভ্যাসের পেছনে লুকিয়ে আছে বিষ, ধ্বংস আর অন্ধকার ভবিষ্যৎ।
সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো—অনেক ধূমপায়ী নিজের অভ্যাসকে যুক্তি দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করে
👉 ধূমপান না করলে ঘুম হয়না।
👉 কোনো কাজ করার শক্তি পাইনা।
👉 খাবার খেতে মন চাইনা।
শুধু সিগারেট নয়—গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল—এসব মরণনেশা সমাজের শিরা-উপশিরা গিলে ফেলছে।
অনেকে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, কেউবা বন্ধুদের দেখাদেখিতে বা নিছক শখের বসে নেশার পথে পা বাড়ায়।
অনেক মেধাবী তরুণ-তরুণীও খারাপ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে নেশায় জড়িয়ে পড়ে—ফলে ধীরে ধীরে তারা পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়, জীবনটা গড়ে ওঠার আগেই নষ্ট হয়ে যায়।
যদি কোনো ভালো ছেলে এই পথে চলে যায়, তবে তার অভিভাবকরাও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
সচেতন বাবা-মা তখন সন্তানকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হন—তারা খারাপ বন্ধুদের সঙ্গ ত্যাগ করতে বলেন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
🛑 মনে রাখা জরুরি:
এই নেশা শুধু একজন ব্যক্তিকে নয়, গোটা পরিবার, এমনকি পুরো সমাজকে ধ্বংস করে দেয়।
✅ তাই আসুন— নেশার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলি,
সচেতন হই, সচেতন করি,
আর যারা এ অভ্যাসে জড়িয়ে গেছে—তাদের পাশে দাঁড়াই, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই।
অনেক সময় দেখা যায়, কিছু পুরুষ রোগী হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে বসেই সিগারেট ধরিয়ে দেয়।
তাদের ভাব দেখে মনে হয় যেন এটা খুব সাধারণ একটা ব্যাপার! কিন্তু তারা জানেই না, এই আচরণ কতটা মারাত্মক হতে পারে।
হোমিওপ্যাথিক ওষুধ অত্যন্ত সংবেদনশীল। ধূমপানের ধোঁয়া—বিশেষত চেম্বারের ভেতরে তা ছড়িয়ে পড়লে—ঔষধের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
এই ধরণের ওষুধ মুখের লোমকোষ, জিহ্বা ও গলায় সরাসরি কাজ করে, আর ধূমপানের ধোঁয়া ওই প্রভাবকে ব্যাহত করে।
ফলে রোগী নিজেই নিজের চিকিৎসাকে ব্যর্থ করে তুলছে—যা না বোঝার কারণে সে ওষুধকে দোষ দেয়, অথচ সমস্যার মূল কারণ তারই অভ্যাস।
🔹 তাই, সবার জানা জরুরি: ✅ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নেওয়ার আগে ও পরে অন্তত ৩০-৬০ মিনিট ধূমপান এড়ানো উচিত।
✅ চিকিৎসকের চেম্বার ধূমপানমুক্ত রাখা শুধু ভদ্রতা নয়, এটি একটি প্রয়োজনীয়তা।
🛑 ধূমপান শুধু শরীর নয়, চিকিৎসাও ব্যর্থ করে দেয়।
আসুন, নিজের ও অন্যের ভালো চেয়ে ধূমপান ত্যাগ করি।
আমরা যদি সত্যিই সমাজকে সুস্থ দেখতে চাই, তবে আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।
✅ স্কুল-কলেজে ধূমপান বিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
✅ পরিবারকে সন্তানের প্রতি নজর রাখতে হবে।
✅ এবং সবচেয়ে বড় কথা, সমাজে ধূমপানকে ‘স্টাইল’ হিসেবে না দেখে ‘ধ্বংস’ হিসেবে তুলে ধরতে হবে।
ধূমপান ছাড়া কি জীবন চলে না? নিশ্চয়ই চলে। বরং ধূমপান ছাড়া জীবন হয় আরও সুন্দর, আরও সুস্থ। যারা ধূমপান ছেড়েছেন, তারা জানেন—বাতাসে সত্যিকারের নির্মলতা কেমন, খাবারে স্বাদ কেমন করে ফিরে আসে, নিজের শরীর ও মনের মধ্যে কতটা পরিবর্তন আসে।
*তরুণ তরুণীদের এই নেশার হাত থেকে আমাদের বাঁচাতে
হলে যা করনীয়:
👉পরিবারে সচেতন পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
👉 বিদ্যালয়-মহাবিদ্যালয়ে ধূমপানবিরোধী সচেতনতা কর্মসূচি চালু করতে হবে।
👉 সন্তানদের প্রতি বাবা -মার নজরদারি ও ভালো বন্ধুত্ব গড়ে তোলার পরিবেশ দিতে হবে।
👉 যারা ধূমপান করে, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে, ধীরে ধীরে
তাদের সঠিক পথে ফেরানোর চেষ্টা করতে হবে।
🔚 শেষ কথা:
🛑 ধূমপান শুধু একজন ব্যক্তিকে নয়—তার পরিবার, ভবিষ্যৎ, এমনকি গোটা সমাজকেই ধ্বংস করে দেয়।
🚫 এটা ফ্যাশন নয়—এটা ধ্বংসের সিগন্যাল।
🌱 আসুন, নেশার বিরুদ্ধে সচেতন হই, প্রতিবাদ করি, এবং যারা এর মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে—তাদের পাশে দাঁড়াই।
📢 বলি—“ধূমপান নয়, সুস্থতা হোক আমাদের স্টাইল।”