Close

বাংলাদেশের পরিবেশ দূষণ

বাংলাদেশের পরিবেশ দূষণ: একটি উদ্বেগজনক চিত্র

বাংলাদেশ আজ এক ভয়াবহ পরিবেশগত সংকটের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শিল্পায়নের পাশাপাশি দেশের পরিবেশ দূষণ একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বায়ু, পানি ও মাটির দূষণ এখন সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অব্যবস্থাপনা, আইন প্রয়োগে দুর্বলতা এবং সচেতনতার অভাব—এই সব মিলিয়ে বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

বায়ু দূষণ

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় প্রায়ই ঢাকার নাম উঠে আসে। যানবাহনের কালো ধোঁয়া, ইটভাটা, কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য গ্যাস ও নির্মাণ কাজের ধুলাবালি মিলিয়ে বায়ু দূষণের মাত্রা আশঙ্কাজনক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর মানদণ্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ু মান প্রায় সবসময়ই ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে থাকে, যা শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

পানি দূষণ

দেশের নদ-নদীগুলোর অবস্থাও ভয়াবহ। বিশেষ করে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদী শিল্পবর্জ্য ও মলমূত্রে দূষিত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া, কৃষিক্ষেত্রে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার ও অপরিকল্পিতভাবে বর্জ্য ফেলা পানির উৎসগুলোকে দূষিত করে তুলছে। এতে করে সুপেয় পানির সংকটও বাড়ছে।

মাটি দূষণ

মাটিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কৃষিজমির উর্বরতা হ্রাস করছে। পলিথিন, প্লাস্টিক এবং অন্যান্য অপচনশীল বর্জ্য মাটির গুণগত মান নষ্ট করছে। এতে করে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

পরিবেশ দূষণের প্রভাব

পরিবেশ দূষণের কারণে বাংলাদেশে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সার, চর্মরোগ, ডায়রিয়া ও নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তন, বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপও বাড়ছে, যা পরিবেশগত ভারসাম্যকে আরও বিপর্যস্ত করে তুলছে।

সমাধানের উপায়

পরিবেশ দূষণ রোধে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি:

  1. কঠোর আইন প্রয়োগ: শিল্প ও যানবাহনের বর্জ্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে।
  2. পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার: ইটভাটা ও কলকারখানায় আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি চালু করতে হবে।
  3. সচেতনতা বৃদ্ধি: জনগণের মাঝে পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
  4. বনায়ন কর্মসূচি: শহর ও গ্রামে ব্যাপকহারে গাছ লাগানো এবং বন সংরক্ষণ করতে হবে।
  5. পলিথিন বন্ধ: একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ও পলিথিন নিষিদ্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশের পরিবেশ দূষণ এখন একটি জাতীয় সংকট। এই সংকট মোকাবেলায় সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে। এখনই সচেতন না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য দেশ রেখে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

খন্দকার রাজীব আহমেদ একজন কবি ও লেখক। জন্ম টাঙ্গাইল জেলার সদর থানায়। লেখক বিভিন্ন বিষয়ের উপর আর্টিকেল, ডকুমেন্টারি ও কবিতা লিখেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Leave a comment
scroll to top