পৃথিবীতে প্রায় প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগেরই কিছু পুর্বাভাস থাকে। পুর্বাভাস ব্যতীত কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘঠিত হয় না। কিন্তু তফাৎটা হচ্ছে কোন কোন পুর্বাভাসের পর থেকে দুর্যোগ সংঘঠিত হওয়ার মধ্যকার সময়টা কোনো ক্ষেত্রে বেশী আবার কোনো ক্ষেত্রে কম। আবার কিছু কিছু দুর্যোগের পূর্বাভাস আমাদের বোধগম্য নয়। এরকমই একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে বজ্রপাত।
আমাদের দেশে প্রায় প্রতিবছরই অনেক মানুষ বজ্রপাতে প্রাণ হারান। আর আমরাও এটাই জেনে আসছি যে বজ্রপাত এর কোন পূর্বাভাস নেই ও কারও উপর বজ্রপাত হলে তার মৃত্যু অনিবার্য।
কিন্তু বিজ্ঞানীদের গবেষনায় উঠে এসেছে যে, বজ্রপাত হলে বেশীরভাগ মানুষই প্রাণে বেঁচে যেতে পারেন যদি একটুখানি সচেতন হওয়া যায়। আমরা আজ জানবো বজ্রপাতের কিছু পূর্বাভাস ও এর থেকে বাঁচার উপায়।
বজ্রপাত কোন কোন স্থানে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?
সাধারনত, বজ্রপাত খোলা বা উন্মুক্ত স্থানে বেশী হয়ে থাকে। যেমন- খোলা মাঠ, জলাশয়, পাহাড় ইত্যাদি। তবে গাছপালা, জঙ্গল, রাস্তাঘাট এমনকি বাসগৃহেও বজ্রপাত হয়ে থাকে। অনেকেই হয়তো কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহন করতে বলেন, কিন্তু তার বেশিরভাগই হচ্ছে আপনি বজ্রপাত হতে পারে এমন জায়গায় থাকবেন না। কিন্তু কথা হল, যদি আপনার কপাল মন্দ হয়, ও আপনি যদি যেখানে বজ্রপাত হবে, ঠিক ঐ মুহুর্তেই ওখানে থাকেন?
প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর মত বজ্রপাতেরও কিছু পুর্বাভাস আছে। কিন্তু তা খুবই কম সময় এর। আর ততটুকু সময়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। তাই সর্বনিম্ন ক্ষতি মেনে নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করাই ভালো।
তাই চলুন জেনে নেই কিছু পূর্বাভাস ও আক্রান্ত হলে করনীয়।
কিভাবে বুঝবেন আপনার উপর বজ্রপাত হতে যাচ্ছে? (বজ্রপাতের পূর্বাভাস)।
১। আপনার চুল, শরীরের পশম খাড়া খাড়া হয়ে উঠবে। ত্বক শিরশির করতে পারে।

২। আপনি আপনার মুখে ধাতব জিনিসের স্বাদ অনুভব করবেন। (যেমন কোন সেফটিপিন, সুই বা যেকোন ধাতব পদার্থ মুখে নিলে যেমন একটা টক জাতীয় /অম্লীয় স্বাদ পাওয়া যায়)।
৩। আপনি মৃদু শো শো / ক্রি ক্রি বা রেডিও এর মত কিছুটা আওয়াজ পাবেন।
৪। আপনার আশে পাশে কোন ধাতব বস্তু থাকলে তাতে St. Elmo’s Fire (এক প্রকার নীলাভ সাদা স্পার্কিং) দেখতে পাবেন। কখনও কখনও ধাতব বস্তু ছাড়াও মাটি / পাথর এও তা দেখা যেতে পারে।



এগুলোর যেকোন একটি বা একাধিক লক্ষন দেখলেই ধরে নিন আপনি বজ্রপাত এর টার্গেট ও সর্বোচ্চ ১ -২ সেকেন্ড এর ভেতরেই আপনার উপর বজ্রপাত হতে যাচ্ছে।
এ অবস্থায় আপনার যা করনীয়-
ভূলেও দৌড় দিতে যাবেন না। কারন আপনি ১-২ সেকেন্ড এ হয়তো কয়েক মিটার পথ অতিক্রম করবেন কিন্তু তাতে বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হওয়া থেকে বাঁচতে পারবেন না। তার চেয়ে বরং আপনি দ্রুত লাইটনিং পজিশন নিয়ে (হাঁটু না গেড়ে নিচু হয়ে কুণ্ডলীর মতো) বসে পড়ুন ও আপনার মাথা ও কান সংরক্ষিত করুন। কোনক্রমেই শুয়ে পড়বেন না। কারন, শুয়ে পড়লে আপনার শরীরের আরও বেশী অংশ দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে। আপনার উদ্যেশ্য থাকবে যেহেতু আপনি বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হওয়া থেকে বাঁচতেই পারছেন না, সেহেতু আপনার শরীরের যত কম অংশ দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, সে ব্যবস্থা করা। আপনি লাইটনিং পজিশনে বসলে, যদিও আপনার শরীরে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে, কিন্তু আপনার মস্তিস্ক, হৃৎপিন্ড, লিভার ও গুরুত্বপূর্ন অঙ্গগুলো রক্ষা পাবে। অনেক সময় আপনার হার্ট বন্ধ হতে পারে সেক্ষেত্রে অন্য কারও আপনার বুকে চাপ দিয়ে হার্ট সচল করতে হবে। আপনিও অন্য কাউকে এ অবস্থায় দেখলে দ্রুত হার্ট সচল করার চেষ্টা করুন ও হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করুন। মনে রাখতে হবে বজ্রপাত হলেই মানুষ সাথে সাথে মারা যায় না। একজন বিদ্যুৎপৃষ্ঠ মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসাই বজ্রপাতে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।

আর মনে রাখবেন, যদিও আপনি এরকম করে বেঁচে যেতে পারেন, কিন্তু আপনি একেবারে অক্ষত অবস্থায় বেঁচে থাকবেন না।
আপনার যে যে ক্ষতি হতে পারে, তা হলো-আপনি শ্রবন সমস্যায় ভুগতে পারেন, আপনার স্নায়ু বিকল হয়ে যেতে পারে, আপনি প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারেন, আপনার শরীরে চিরস্থায়ী দাগ বসে যেতে পারে ইত্যাদি।
প্রত্যেকবার বিজলিতে দুইটা ডাক দেয়। প্রথম ডাকে পরে পরের ডাকে উঠে যায় এটা কি সত্য? আর কলাগাছে পরলে আটকে যায় এটাও কি সত্য?