আমরা সকলেই জানি খাবার হলো ভালোবাসা জয়ের অন্যতম পন্থা। আর দিন দিন খাদ্য এর প্রয়োজনীয়তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাচ্চি একটি বিশেষ ধরণের খাবার যা সুগন্ধি চাল, ঘি/তেল, গরম মশলা এবং কাঁচা মাংস মিশিয়ে রান্না করা হয়। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমদের মাধ্যমেই এদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
নামকরণ:
কাচ্চি বিরিয়ানির কাচ্চি শব্দটি উর্দু শব্দ কাক্কা থেকে এসেছে, যার বাংলা অর্থ কাঁচা। যেহেতু মাংস সরাসরি সুগন্ধি ভাতের সাথে রান্না করা হয়, তাই একে কাচ্চি বলা হয়। হিন্দি এবং উর্দুতেও এটি একই নামে পরিচিত।
উৎপত্তিঃ
কাচ্চি বিরিয়ানির উৎপত্তি মধ্য এশিয়ার দেশগুলিতে। তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তানের লোকেরা লাল মাংস (গরু/মাংস) পছন্দ করত, এই লাল মাংস দিয়েই এই ঠান্ডা অঞ্চলের লোকেরা কাচ্চি প্রচলন শুরু করে। তারা ভাত, মাখন, লবণ, কালো মরিচ, এলাচ এবং স্থানীয় মশলা জায়ফল দিয়ে একটি খাবার তৈরি করত। ১৮১০ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে কাচ্চি বিরিয়ানির প্রচলন শুরু হয় যখন মুঘল সুবেদার এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা প্রশাসন পরিচালনার জন্য ঢাকায় আসেন। তাদের বেশিরভাগই বর্তমান ভারতের লখনৌ থেকে এসেছিলেন এবং তারা তাদের সাথে ব্যক্তিগত রাঁধুনি নিয়ে এসেছিলেন। যদিও পরবর্তীতে অনেক সুবেদার ঢাকা থেকে চলে আসেন, কিছু রাঁধুনি ঢাকায় থেকে যান এবং ছোট পরিসরে তাদের নিজস্ব দোকান স্থাপন করেন, যা ঢাকায় কাঁচা বিরিয়ানি খাবারকে বাঁচিয়ে রেখে মোঘলাই খাবার এবং বিনোদনের ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করে। এটি ধীরে ধীরে ঢাকার স্থানীয় খাবারের পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং একটি অনন্য স্বাদ তৈরি করে, সাধারণ মানুষের মন জয় করে এবং ধীরে ধীরে তাদের খাদ্য তালিকার একটি নিয়মিত অংশ হয়ে ওঠে।
কাচ্চি বিরিয়ানি তৈরির জন্য:-
মাংস ম্যারিনেট করতে যা যা লাগবে
১। ২ কেজি গরু/খাসির মাংসের বড় সাইজের টুকরা,
২। ১ টেবিল চামচ লবণ,
৩। ২ টেবিল চামচ আদা বাটা,
৪। ১.৫ টেবিল চামচ রসুন বাটা,
৫। ১ চা চামচ সাদা মরিচ গুঁড়ো,
৬। ১ চা চামচ এলাচ গুঁড়ো,
৭। ১ চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ো,
৯। আধা চা চামচ জায়ফল গুঁড়ো,
১০। আধা চা চামচ জয়ত্রী গুঁড়ো,
১১। ১ টেবিল চামচ মরিচ গুঁড়ো,
১২। ৪ টেবিল চামচ ঘি,
১৩। আধা কাপ দুধ,
১৪। ১ চিমটি জাফরান,
১৫। ১ কাপ টক দই এবং
১৬। ১ চা চামচ লবণ।
১৭। পিয়াজ বিরিস্তা ১.৫ কাপ।
বিরিয়ানি ভাত রান্নার জন্য:-
১। বাসমতি চাল ১ কেজি,
২। তেজপাতা ২টি,
৩। লবঙ্গ ১ চা চামচ,
৪। দারুচিনি ২টি,
৫। এলাচ ৫-৬টি এবং
৬। স্বাদমতো লবণ।
বিরিয়ানির স্তরের জন্যঃ-
১। কাবাব চিনি ১ চা চামচ,
২। শাহী জিরা আধা চা চামচ,
৩। বাদাম গুঁড়ো ২ চা চামচ,
৪। রসুন আধা চা চামচ,
৫। ঘি / মাখন / তেল ২ টেবিল চামচ,
৬। আলু ৪-৫ টুকরো,
৭। সবুজ মরিচ ৫-৬টি,
৮। কালো এলাচ ২টি,
৯। কাঁচা ৫-৬টি ,
১০। আলু বোখরা ৭-৮টি,
১১। পিয়াজ বিরিস্তা ১ কাপ।
কিভাবে করবেন:
মাংস ভালো করে ধুয়ে ম্যারিনেট করুন। আরেকটি বড় পাত্রে পানি নিন এবং তাতে লবণ দিন। এই লবণ পানিতে মাংস ১ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এতে মাংস নরম হবে এবং লবণ ভালোভাবে ভেতরে ঢুকে যাবে।
১ ঘন্টা পর মাংস বের করে নিন এবং বাকি পানি রান্নাঘরের তোয়ালে দিয়ে চেপে নিন।
এবার মাংসের মধ্যে আদা, রসুন, সাদা গোলমরিচ গুঁড়ো, এলাচ গুঁড়ো, দারুচিনি গুঁড়ো, জায়ফল গুঁড়ো এবং মরিচ গুঁড়ো দিয়ে একে একে মাংস দিন। তারপর ঘি, দুধ, জাফরান, টক দই, পিয়াজ বিরিস্তা এবং লবণ দিন। সবকিছু একসাথে ছড়িয়ে ২/৩ ঘন্টা ম্যারিনেট করুন।
এবার যে পাত্রে বিরিয়ানি রান্না করা হবে, তাতে মাংস নিন। তেজপাতা, লবঙ্গ, দারুচিনি, এলাচ, লবণ, কাবাব চিনি, জিরা, বাদাম গুঁড়ো এবং কিশমিশ একে একে দিন। এবার আলু এবং মরিচ যোগ করুন। আলু সামান্য লবণ এবং জর্দার রঙ দিয়ে হালকা ভাজা উচিত।
বিরিয়ানি ভাত তৈরি করতে, আরেকটি পাত্রে জল নিন এবং দারুচিনি, লবঙ্গ এবং তেজপাতা যোগ করুন। এবার বাসমতি ভাত এবং লবণ দিন।
তারপর ভাত নামিয়ে নিন। এবার যে পাত্রে মাংস রাখা হয়েছে, সেখানে গরম বাসমতি ভাত ছড়িয়ে দিন। ৩ টেবিল চামচ ঘি, কেওড়া জল, তরল দুধ, কাঁচা মরিচ, আলুবোখারা, পিয়াজ বিরিস্তা এবং জাফরান দিয়ে একে একে ঢেকে দিন।
এবার আগে থেকে তৈরি ময়দার কাই/ ডো দিয়ে পাত্রের চারপাশে আটকে দিন যাতে কোনও দিক খোলা না থাকে তাহলে সম্পূর্ণ প্রেসারে মাংস সিদ্ধ হবে ভালোভাবে। প্রথমে ১০ মিনিট কম আঁচে ওভেনে রাখুন এবং পরবর্তী ৯০-১০০ মিনিট কম আঁচে রাখুন অবশ্যই রান্নার পাত্রটি একটা লোহার পাত্রের উপরে রাখলে ভালো হয় এতে মাংস আর পুড়ে যাবেনা।
ভালো লাগলে অবশই বাসায় বানানোর ট্রাই করবেন আর জানাবেন নিশ্চয়ই।