“ঘুম হঠাৎ ভেঙে গেছে। মনে হচ্ছে আমার আর শক্তি নেই। হাত-পা নাড়ানোর, মুখে শব্দ করার শক্তি নেই। অনেক চেষ্টা করলে গুনগুন করার মতো শব্দ হয়।”
“মনে হচ্ছে যেন আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যাচ্ছি। এটা মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। কিন্তু মনে হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে গেছে। সেই সময়টা কত ভয়াবহ ছিল। যার সাথে হয়নি সে কখনও বুঝতে পারবে না যে এটা কতটা ভয়ানক।”
আমাদের আশেপাশের অনেকের কাছ থেকে এমন অভিজ্ঞতা শোনা যায়। যাকে অনেকে “বোবায় ধরা”(Sleep Paralysis) বলে।
স্লিপ প্যারালাইসিসের ক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তি কিছুক্ষণের জন্য কথা বলার বা নড়াচড়া করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এটি সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে এক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে, সেই সময় রোগী খুব ভীত হয়ে পড়েন। ঘুমের সেই পর্যায়কে বলা হয় র্যাপিড আই মুভমেন্ট (Rapid Eye Movement- REM) রেম। রেম হল ঘুমের এমন একটি পর্যায় যখন মস্তিষ্ক খুব সক্রিয় থাকে এবং মানুষ এই পর্যায়ে স্বপ্ন দেখে। কিন্তু সেই সময়ে শরীরের অন্য কোনও পেশী কোনও কাজ করে না। এর কারণে, এই সময়ে মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকলেও, শরীর অসাড় বোধ করে।
স্লিপ প্যারালাইসিসের জন্য নির্দিষ্ট কোন বয়স নেই কিন্তু কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে স্লিপ প্যারালাইসিস সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এই অবস্থা যেকোনো বয়সে যে কারোরই হতে পারে। স্লিপ প্যারালাইসিসের কারণ:
- পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব বা ঘুমিয়ে পড়া। অসময়ে ঘুম। অনেক সময় কাজের সময় নির্দিষ্ট না থাকলে, অথবা দূরে ভ্রমণ করলে ঘুমের অভাব দেখা দিতে পারে।
- আপনি যদি মাদকাসক্ত হন বা নিয়মিত ধূমপান এবং মদ্যপানে আসক্ত হন।
- পরিবারের কারও যদি স্লিপ প্যারালাইসিস থাকে।
- আপনার যদি সামাজিক উদ্বেগ বা প্যানিক ডিসঅর্ডার ( Panic Disorder) বা বাইপোলার ডিসঅর্ডারের (Bipolar Disorder) মতো মানসিক সমস্যা থাকে।
স্লিপ প্যারালাইসিসের লক্ষণ:
- জোরে জোরে শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হয়। বুকে কিছু চাপ অনুভব হবে। আমি শ্বাস নিতে পারছি না।
- অনেকের চোখ খুলতে এমনকি চোখ নাড়াতেও সমস্যা হয়।
- অনেকে মনে করে যে তাদের চারপাশে এমন কোনও ব্যক্তি বা বস্তু আছে যে তাদের খুব ক্ষতি করতে চায়।
- প্রচণ্ড ভয় থাকে। শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
- হৃদস্পন্দন এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বৃদ্ধি পায়। অনেকের রক্তচাপও বাড়তে পারে।
- পুরো ব্যাপারটি কয়েক সেকেন্ড থেকে এক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। একবার প্রভাব চলে গেলে, আগের মতো কথা বলতে বা নড়াচড়া করতে কোনও সমস্যা হয় না। তবুও, অনেকে আবার ঘুমাতে যেতে অস্থির এবং উদ্বিগ্ন বোধ করেন।
স্লিপ প্যারালাইসিস প্রতিরোধের উপায় ঃ
✔ নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন (প্রতি রাতে ৭-৯ ঘণ্টা)
✔ একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও জাগ্রত হওয়ার অভ্যাস করুন
✔ অতিরিক্ত মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন
✔ ঘুমানোর আগে মোবাইল, টিভি বা স্ক্রিন টাইম কমান
✔ পিঠের উপর না শুয়ে পাশে ঘুমান
স্লিপ প্যারালাইসিস হলে কী করবেন?
- ভয় না পেয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুন।
- নিয়ন্ত্রিত শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করুন।
- শরীরের ছোট কোনো অংশ নাড়ানোর চেষ্টা করুন (যেমন আঙুল বা চোখ)।
- প্রার্থনা বা ইতিবাচক কিছু ভাবতে চেষ্টা করুন।
- স্লিপ প্যারালাইসিস ভয়ংকর মনে হলেও এটি শারীরিকভাবে ক্ষতিকর নয় এবং এটি কোনো অশরীরী ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়। যদি এটি ঘন ঘন হয়, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
আপনাদের কারো যদি এই বিষয়ে কোন অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে দয়া করে শেয়ার করুন।