Close

সঠিক খাদ্যাভাসে ঋতুচক্রে সুস্থতা

female line art happy period

female line art happy period

মিনিস্ট্রুয়েশন বা ঋতুচক্র একটি সুস্থ সাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রকৃয়া, যা নারীর সামগ্রিক সুস্থতার প্রতিচ্ছবি। তদুপরি, মাসিকের সময় সকল নারীই কম-বেশি কিছু না কিছু সমস্যার সম্মুখিন হয়। এই সময়ে পেটে ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, বমি ভাব, ক্লান্তি, মেজাজের পরিবর্তন, হজমে সমস্যা হয়ে থাকে। সুষম খাদ্যগ্রহণ এবং সঠিক জীবন ব্যাবস্থাই পারে এই সমস্যাগুলোর সহজ ও প্রাকৃতিক সমাধান দিতে।

সুষম খবার অর্থাৎ দৈনন্দিন খাবারে তার শরীরে প্রোয়োজনীয় শক্তি এবং সকল ধরনের পুষ্টি উপাদানের পর্যাপ্ত উপস্থিতি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরী। এর পাশাপাশি নারীর শরীরে এই বিশেষ সময় কিছু খাদ্যু উপাদানের প্রতি মনোযোগ দেওয়া জরুরী যা নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল-

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার এই সময়ে রক্তক্ষরণের সাথে প্রচুর আয়রন শরীর থেকে বের হয়ে যায়। আয়রন ঘাটতির ফলে এই শরীর ব্যাথা, ক্লান্তি, মাথা ঝিমঝিম করার মতো সমস্যা দেখা দেয়৷ তাই আয়রনের এই ঘাটতি রোধ করতে খাদ্যতালিকায় অবশ্যই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত পরিমানে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে, যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা, কচুশাক, পুঁইশাক, ডাটাশাক, খেজুর, পাকা তেঁতুল, আমড়া, চর্বিছাড়া লাল মাংস ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

ভিটামিন-সিঃ আয়রন শরীরে সঠিকভাবে এবজর্ব বা শোষিত হওয়ার জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন- পেয়ারা, আমড়া, আমলকি, লেবু, কমলা ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় থাকতে হবে। ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারঃ শরীরে আয়রন এবজর্পশনের সহায়তার জন্য খাদ্যে ম্যাগনেসিয়া্মের উপস্থিতিও জরুরী। কলা, পালংশাক, ডার্কচকলেট, বাদাম, কুমড়ার বীজ হতে পারে ম্যাগনেসিয়ামের উপাদেয় উৎস।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ওমেগা-৩ ফ্যাটিএসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন- তৈলাক্ত মাছ, সামূদ্রিক শৈবাল, বিভিন্ন ধরনের বাদাম-বীচি জাতীয় খাবার, এভোক্যাডো, কিউই, পেপে, সয়াবীন তেল, ক্যানোলা তেল, চিয়া সিড প্রদাহ এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে যা শরীর থেকে ক্ষতিকর ফ্রি-রেডিকেল বের করে দিতে মুখ্যভূমিকা পালন করে প্রদাহ তৈরির ঝুঁকি হ্রাস করে। তাজা শাক-সবজি, ফল-মূল বিশেষ করে বেরি জাতীয় ফল (ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, জাম), কলা, টমেটো, ক্যাপ্সিকাম, ডার্ক চকলেট হতে পারে এর উপাদেয় উৎস।

ফাইবার সমৃদ্ধ পর্যাপ্ত ফাইবার বা খাদ্য আঁশ সমৃদ্ধ খাবার স্বাস্থ্যকর হজমপ্রক্রিয়া বজায় রেখে অন্ত্রের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং পেট ফাঁপা কমাতে সাহায্য করতে পারে। সম্পুর্ন আশযুক্ত শস্য (চাল-আটা-ওটস), সব ধরনের শাক-সবজি ও ফল, বাদাম, বিচি জাতীয় খাবার খাদ্য আশের ভালো উৎস।

ভিটামিন ডি: সঠিক মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ করতে এবং মাসিকের লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করে ভিটামিন-ডি। তৈলাক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, কড-লিভার তেল, গরু-খাসির কলিজা, মাশরুম প্রাকৃতিকভাবে পাপ্ত ভিটামিন-ডি জাতীয় খাবারে উৎস। এছাড়াও সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত সময়ের মাঝে দৈনিক ১০-২০ মিনিট সরাসরি সূর্যালোকে থাকলে আমাদের শরীর নিজেই ভিটামিন-ডি তৈরি করে নিতে পারে।

পানি: মাসিকের রক্তপাতের সাথে প্রচুর পরিমানে পানি বের হয়ে যায় শরীর থেকে। এই অতিরিক্ত পানিশুন্যতা পূরণের জন্য এই সময়ে অন্য সময়ের তুলনায় পানির চাহিদা বৃদ্ধি পায় যা সঠিকভাবে পুরণ না হলে ডিহাইড্রেশনের থেকে মাথা ব্যাথা, বমি ভাব তৈরি হয়। আবার পর্যাপ্ত পানি পান না করলে অন্ত্রের সঞ্চালনেও ব্যাঘাত ঘটে যার থেকে সৃষ্টি হতে পারে পেট ফাঁপা, বমিভাব। তাই এই সময়ে সঠিক পরিমানে পানি পান করা অত্যন্ত জরুরী।

চিনি এবং ক্যাফেইন এই সময়গুলোতে মুড সুইং এবং মিষ্টির ক্রেভিং বেড়ে যায়, তথাপি তা সাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এই জাতীয় উপাদানগুলো ইনসুলিনের কার্যকারীরা ও হরমোনের ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটায়, রক্তচাপ এবং মন-মেজাজের (মুড সুইং) অস্থিতিশিলতা তৈরি করে, শরীরে প্রদাহের মাত্রা বৃদ্ধি করে, স্ট্রেস হরমোন বৃদ্ধি করে। যার ফলে মাথা ব্যাথা, হাতে-পায়ে পানি আসা, পেট ফাঁপা ইত্যাদি নানান ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। তাই এই সময়ে চিনি এবং ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার (কফি, কড়া লিকারের চা, কোকোবীন, কার্বোনেটেড ড্রিঙ্ক, কমার্শিয়াল এনার্জিড্রিঙ্ক) এড়িয়ে চললে ব্যথা এবং অন্যান্য সাধারন যে লক্ষণগুলোর সম্মুখিন হয় মহিলারা  তা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

শরীর ও মনের সুরক্ষা অর্জনের লক্ষে খাদ্যতালিকায় স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন অপরিহার্য। সুষম খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি ভালো ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম, অতিরিক্ত মানসিক চাপ এড়ানো সহ স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চলার মাধ্যমে নারী সহজেই তার সমস্যাগুল এড়াতে সক্ষম হতে পারে এবং তার এই বিশেষ দিনগুলোকে করে তুলতে পারে আরো স্বস্তিদায়ক।

সর্বশেষে সকল নারীর জন্য অন্তরের অন্ত্ররস্থল থেকে রইলো শুভকামনা।

সানজিদা শারমীন

সিনিয়র ক্লিনিকাল ডায়েটিশয়ান

ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, উত্তরা

এক্স- সিনিয়র ক্লিনিকাল ডায়েটিশয়ান, ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেড।

Senior Clinical Dietician Labaid Diagnostic Center, Uttara-1 Ex-United Hospital Limited.

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Leave a comment
scroll to top