Close

ডেংগু রোগে পথ্যের গুরুত্ব

dengue

দেশে বর্তমানে ডেংগু রোগের অধিক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিগত কয়েক বছর যাবতই এই মৌসুমে ডেংগু হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। করোনার, অন্যান্য ভাইরাল ফিভারের পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মনে দেখা দিচ্ছে আতঙ্ক। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্লাটিলেট কমে যাওয়া। এ ছাড়া তীব্র মাথাব্যথা, মাংসপেশি ও চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরে লালচে র‌্যাশ উঠতে পারে।

ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত একটি রোগ, যা এডিস মশার মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে থাকে। ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত রোগ এবং যে ভাইরাসের কারণে রোগটি হয়, তার নাম ডিইএনভি। আক্রান্ত হওয়ার ৩-১৪ দিনের মধ্যে এই রোগের লক্ষণগুলোর স্পষ্ট হয়

ডেঙ্গু রোগের কিছু সাধারণ লক্ষণ:

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো সাধারণত জ্বর শুরু হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে, জ্বর সেরে যাওয়ার পরও ফুসকুড়ি দেখা যেতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (Dengue Hemorrhagic Fever  বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম Dengue Shock Syndrome) হতে পারে, যেখানে রক্তপাত এবং শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকার্যকর হয়ে যাওয়ার মতো মারাত্মক উপসর্গ দেখা দিতে পারেঃ

জ্বর:  হঠাৎ করে উচ্চ জ্বর হওয়া, যা ১০১-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে

মাথাব্যথা: তীব্র মাথাব্যথা, বিশেষ করে চোখের পিছনে ব্যথা

শরীরে ব্যথা: মাংসপেশি ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, যা “ব্রেক বোন ফিভার” নামেও পরিচিত 

ফুসকুড়ি: শরীরে লালচে ফুসকুড়ি ওঠা

বমি বমি ভাব এবং বমি: বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে

ক্লান্তি: অতিরিক্ত দুর্বলতা এবং ক্লান্তি বোধ হওয়া

অন্যান্য উপসর্গ: কিছু ক্ষেত্রে, নাক বা মাড়ি থেকে রক্তপাত, সহজে ত্বক থেঁতলে যাওয়া বা ত্বকে ক্ষত হওয়া ইত্যাদি উপসর্গও দেখা যেতে পারে

প্রতিকারঃ

এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রথম মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় খাবার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা বাঞ্ছনীয়। একটি সুষম খাবার যেমন অনাক্রান্ত ব্যাক্তির ক্ষেত্রে সঠিক রোগ প্রোতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখার মাধ্যমে ডেঙ্গু ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কয়ায়, তেমনি আক্রান্ত ব্যাক্তির দ্রূত আরোগ্য লাভেও সহায়তা করে। এর পাশাপাশি রোগএর জীবাণুকে শরীর থেকে ফ্ল্যাশ আউট করার জন্য পর্যাপ্ত পানি বা তরল পান করাও বাঞ্ছনীয়।

ডেঙ্গু এবং ডেঙ্গু পরবর্তি পথ্য

সঠিক চিকিৎসা ও সঠিক পথ্যের মাধ্যমে ডেংগুর রোগাবস্থার উন্নতি হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডেংগু ভালো হয়ে যাওয়ার পরেও থেকে যায় এর প্রভাব ও দূর্বলতা। এই দূর্বলতা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় কয়েক মাস লেগে যায়। রোগাক্রান্ত হওয়ার বিভিন্ন ধাপে রুগীর পথ্যের ধরণ ভিন্ন হয়ে থাকে। জ্বরে শরীরের মেটাবলিক রেট বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্যালোরি, প্রোটিন ও ফ্লুইডের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। তাই রুগীর পথ্য পরিকল্পনায় এই বিষয় মাথায় রাখা জরুরী।

রোগের প্রাথমিক ধাপে তরল খাবার গ্রহণ করাটাই শ্রেয়, যেহেতু শক্ত খাবারের তুলনায় শরীর এই খাবার সহজে গ্রহণ করতে পারে। অল্প অল্প করে তরল খাবার গ্রহণ করলে শরীর থেকে চলে যাওয়া পানির শূন্যস্থাণ পূরণ হতে পারে, একইসঙ্গে শরীরে তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

রোগী যখন ডেঙ্গু থেকে উত্তরণের ধাপে থাকে তখন দ্বিতীয় ধাপে সহজে হজমযোগ্য খাবার, যেমন- খিচুড়ি, দই, ভাত, পোরিজ, সেদ্ধ আলু, সেদ্ধ শাকসবজি যেমন পেঁপে, কুমড়ো, সবুজ মটর ইত্যাদি খাওয়ানো শুরু করা যেতে পারে।

স্বাদ বাড়ানোর জন্য লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। নরম ডায়েটের পাশাপাশি ফলের রস, স্যুপ এবং ডাবের পানির মতো প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা প্রয়োজন। এগুলো শরীরের পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

 

ডেংগু রোগাবস্থা ও রোগ পরবর্তি দূর্বলতা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজন সঠিক পথ্য।

এই সময়ে খেতে হবে-

  • পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা
  • পর্যাপ্ত পানি বা তরল জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা
  • ডাবের পানি, পেপের জুস পান করা
  • তাজা শাক-সবজি ও ফল গ্রহণ করা
  • মসলা চা, গ্রিন টি পান করা
  • প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা

এড়িয়ে চলতে হবে-

  • অতিরিক্ত মসলা যুক্ত খাবার
  • ভাজা-পোড়া খাবার
  • কার্বোনেটেড ড্রিঙ্ক
  • গাঢ় লাল, খয়েরি বা বেগুনী রঙের খাবার
  • অধিক স্যালিসাইলেট সমৃদ্ধ খাবার যেমন- কিসমিস বা এই জাতীয় ড্রাইফ্রুট, শুকনা বীন জাতীয় খাবার, সবুজ বাধাকপি, লেটুস।

গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:

  • রোগীর রুচি অনুযায়ী খাবার প্রস্তুত করতে হবে
  • রোগীকে অল্প অল্প পরিমাণে বারবার খাবার দিতে হবে

 

সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি ডেঙ্গু থেকে দ্রুত সেড়ে উঠার জন্য সঠিক খাবার গ্রহণ করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুষম ডায়েটের মাধ্যমে রোগীর শরীরে প্লাটিলেট সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব, পাশাপাশি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্লিডিং, ডিহাইড্রেশন ইত্যাদির মতো গুরুতর জটিলতা রোধ করা সম্ভব।

সানজিদা শারমীন

সিনিয়র ক্লিনিকাল ডায়েটিশিয়ান

Senior Clinical Dietician Labaid Diagnostic Center, Uttara-1 Ex-United Hospital Limited.

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Leave a comment
scroll to top