প্রায় ১০ বছর পর ইমতিয়াজ উদ্দিন বাড়ি ফিরছেন। এত বছর ধরে তিনি কুয়েতে ছিলেন। আজ তিনি বাচ্চাদের জন্য অনেক কিছু কিনেছেন। তার মুখে ছিল এক বিশাল হাসি।
সে চট্টগ্রাম শহর থেকে বেশ দূরে একটা ছোট্ট গ্রামে থাকে। তার মা, দুই মেয়ে, স্ত্রী এবং এক ছেলে রয়েছে। যখন সে চলে গেল, তখন ছোট্ট মেয়েটির সবেমাত্র জন্ম হয়েছিল। সে তাকে ঠিকমতো কোলে নিতে পারেনি। আজকেই সে তাকে দেখবে কোলে নিবে এমন ভাবনা। সে স্টেশনে নেমে ভ্যানে উঠে তার গ্রামে পৌঁছে গেল। গ্রামে প্রবেশের সাথে সাথেই সবাই এগিয়ে এসে শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করল। ইমতিয়াজ উদ্দিনও হাসিমুখে উত্তর দিল। হঠাৎ একটা ছেলে এসে নিজেকে রতন বলে পরিচয় দিল। সে অবাক হয়ে গেল। তার ছেলে এত বড় হয়ে গেছে যে সে তাকে চিনতেও পারেনি।
যখন সে বাড়িতে পৌঁছালো, ইমতিয়াজ উদ্দিন সবাইকে একে একে দেখতে পেলো। তার মা, বড় মেয়ে, স্ত্রী। কিন্তু সে ছোট মেয়েটিকে কোথাও খুঁজে পেলো না। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে স্ত্রী হেসে বললো, ‘অপেক্ষা করো, শীঘ্রই আসবে। সে এসে তোমার কথা জিজ্ঞাসা করবে।’ সে অবাক হয়ে বললো, ‘আমার কথা?’ মি. ইমতিয়াজ উদ্দিন জানতেন যে তার মেয়ে বহু বছর ধরে তার জন্য অপেক্ষা করছে। আর তাই সে যখনই বাইরে থেকে আসে, প্রতিবারই সে তার মাকে তার বাবার কথা জিজ্ঞাসা করে।
ইমতিয়াজ উদ্দিন মেয়েটিকে দেখার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। আর তখনই এক সুন্দরী কিশোরী ঢুকলো। ভেতরে ঢুকতেই সে তার মাকে বলল, ‘মা, আমার বাবা আসছেন?’ তার মা হেসে তাকে দেখাতেই সে দৌড়ে গিয়ে ইমতিয়াজ উদ্দিনকে জড়িয়ে ধরল। আজ, এত বছর অপেক্ষার পর, তার বাবা এসেছেন। আজ সে খুব খুশি।
চার মাস পর
ইমতিয়াজ উদ্দিন আজ কুয়েত ফিরে যাচ্ছেন। বাড়ির সকলকে বিদায় জানানোর পর তিনি দেখলেন যে তার ছোট মেয়েটি সেখানে নেই। তার মন খারাপ হয়ে গেল। ইতিমধ্যে ট্রেন চলে যাচ্ছে, তাকে উঠতে হবে। আর তখনই তিনি তার ছোট মেয়েকে দেখতে পেলেন। সে দৌড়ে গিয়ে বলল, ‘বাবা, এটা নাও। আর সাবধানে থেকো।’ তিনি তার ছোট মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসলেন। ট্রেন চলতে শুরু করেছে। তার মেয়েও ট্রেন ছাড়ার সাথে সাথে নেমে গেল। তিনি তার চোখে জল এবং মুখে হাসি দেখতে পেলেন। দেখতে খুব সুন্দর লাগছে! তিনি মুগ্ধতার সাথে তাকিয়ে আছেন।
ইমতিয়াজ উদ্দিন কুয়েতে গিয়ে তার মেয়ের দেওয়া জিনিসটা দেখেন। ওটা একটা কাগজে মোড়ানো ছিল। ভেতরে একটা ছবি। মেয়ের হাতে আঁকা। একটা মেয়ে আর তার বাবা একে অপরের দিকে দৌড়ে আসছে। সে দেখল মেয়েটা খুব ভালো ছবি এঁকেছে। আর একটা চিঠি পেয়েছে। পুরো পৃষ্ঠায় বারবার একই কথা লেখা আছে। অর্থাৎ,
’বাবা, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।’