লেখিকা: জেরিন জাহান দিশা
গ্রামের মাঝখানে এক ছোট্ট চায়ের দোকান ছিল, যেখানে প্রতিদিন বিকেলে একঝাঁক মানুষ জমা হতো। সেখানে বসে চা পান করা ছিল তাদের এক ধরনের রীতি। মায়া, একজন শান্ত স্বভাবের তরুণী, প্রতিদিন বিকেলবেলা সেখানে আসত। চোখে একটু চিন্তার ছাপ থাকলেও, সে কোনোদিন কাউকে সেভাবে মনের কথা বলেনি। তার জীবন ছিল একঘেয়ে। বই পড়া, চা খাওয়া আর প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা, এটাই ছিল তার নিয়মিত দিনের রুটিন।
একদিন বিকেলে, দোকানে যখন সবার ভিড় ছিল, হঠাৎ একজন তরুণ তার পাশে এসে বসে। তার চোখে এক ধরনের উজ্জ্বলতা ছিল, যেন সারা পৃথিবীকে আলোকিত করে রাখতে চায়। তার নাম ছিল রিয়াদ। তার হাসি ছিল যেন সোনালি রোদে ভরা একটা দিন। মায়া প্রথমবারের মতো কাউকে এত কাছ থেকে দেখল, কিন্তু কিছু বলার সাহস পেল না। তবে, রিয়াদের হাসি তাকে কিছু অদ্ভুত অনুভূতি দিল।
রিয়াদ বলল, “চায়ের সাথে কি অন্য কিছু খাওয়ার ইচ্ছে আছে?”
মায়া একটু থেমে, ধীরে ধীরে বলল, “না, আমি শুধু চা পছন্দ করি।”
রিয়াদ হেসে বলল, “ওহ, তুমি বেশ একা একা চা খাও! আমি কখনো একা চা খাই না। কখনো তোমার সঙ্গে চা খেতে পারি?”
মায়া প্রথমে কিছু বলল না, তবে তার চোখে একটু লাজুক হাসি ফুটে উঠল। সে অনুভব করল, রিয়াদের কথায় এক ধরনের স্নিগ্ধতা রয়েছে। তাদের মাঝে ছোট্ট একটি সম্পর্কের সূচনা হলো।
দিনে দিনে, মায়া আর রিয়াদ একে অপরকে জানতে শুরু করলো। তাদের গল্প ছিল সাদামাটা, কিন্তু প্রতিটি মুহূর্তে নতুন কিছু শিখত তারা। রিয়াদ তার গল্প বলতো, মায়া তার চিন্তা ভাগ করতো। রিয়াদের সাথে মায়া তার একাকিত্ব ভুলে যাচ্ছিল, আর রিয়াদও জানতো, মায়ার হাসি তার জীবনের অমূল্য রত্ন।
একদিন বিকেলে, রিয়াদ মায়াকে বলল, “মায়া, তুমি জানো, তোমার সাথে আমার সময় কেটেছে এতটা সুন্দর, যে আমি আর কিছু চাই না। তুমি কি কখনো ভাবো, আমরা একসাথে পুরো জীবন কাটাবো?”
মায়া চুপ থাকলো কিছুক্ষণ। তার মনে হয়েছিল, তার জীবনে এমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে যা কখনো চিন্তাও করেনি। সে একবার রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি কি জানো, রিয়াদ, আমি নিজেও কখনো ভাবিনি, আমি কারো কাছে এতটা বিশেষ অনুভব করতে পারবো।”
রিয়াদ তার হাতটা ধরে বলল, “তুমি আমার জীবনে সেই বিশেষ মানুষ, যে আমার জীবনের সব কিছুকে আরো সুন্দর করেছে।”
মায়া হেসে বলল, “তাহলে আমরা একসাথে এই পথ চলবো, এই জীবন, একে অপরের সাথে?”
রিয়াদ দৃঢ়ভাবে মাথা নেড়ে বলল, “হ্যাঁ, আমাদের জীবন হবে একসাথে।”
তবে, মায়া ছিল একটু ভয় পেয়ে। সে জানতো, জীবনের এই রকম সম্পর্ক অনেক সময় জটিল হতে পারে। কিন্তু রিয়াদের চোখে ছিল একটি বিশেষ ধরনের আত্মবিশ্বাস, যা তার মনের ভয় দূর করে দিল। মায়া বুঝলো, জীবনে কোনো কিছু পেতে হলে কিছুটা সাহসী হতে হয়। আর রিয়াদ ছিল সে সাহস।
সেই মুহূর্তে, মায়া উপলব্ধি করলো যে জীবনের সেরা গল্পগুলোই সেসব, যেখানে মানুষ তাদের ভালোবাসা পায়, একে অপরকে বুঝে নেয় এবং একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের জীবন গড়তে পারে।
আর তারপর থেকে, মায়া আর রিয়াদের সম্পর্ক শুধুই ভালোবাসার গল্পে পরিণত হলো। তারা একে অপরকে সম্মান করতো, ভালোবাসতো, এবং কখনো ভাবেনি যে তাদের মধ্যে কোনো কিছু কখনো শেষ হতে পারে। তাদের জীবনের এই রূপান্তর ছিল শুধু একটি শুরু, যেখানে সুখ, হাসি, আর একে অপরের পাশে থাকার অঙ্গীকার ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এভাবেই, মায়া আর রিয়াদ একে অপরের জীবনে চিরকাল সুখের সঙ্গী হয়ে রইল, যেখান থেকে ভালোবাসা আর বন্ধুত্বের আসল অর্থ বোঝা গেল।
এখন, যখন তারা একে অপরকে দেখে, তারা বুঝতে পারে, তারা শুধু একটি ভালোবাসার সম্পর্ক নয়, বরং জীবনভর একে অপরের পাশে থাকার অঙ্গীকার।