সকলে তার দিকে তাকিয়ে আছে (সমাপ্ত-হীন প্রেম) ।তারা চোখের পানি মুছে ফেলে মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলে।সকলের দিকে তাকিয়ে বললো।
“আমার আব্বু আম্মু নেই আপু।
সাদিয়া ও শরিফ অপরাধীর ন্যায় মাথা নত করে ফেললো।নিজেদের অজান্তেই বুঝি মেয়েটাকে কষ্ট দিলো।তারা তাদের এমন অপরাধীর ন্যায় করতে দেখে হাসে। ধ্রুবর চোখে কোনো আক্ষেপ নেই,নেই কোনো সমবেদনা।তার মুখে খালি কুটিল হাসি তার হাসি বলে দিচ্ছে।তারা এতিম হওয়াতে তার কোনো যায় আসে না। সাদিয়া মাথা তুলে তারা কাছে যেয়ে জরিয়ে দরে বললো।
“এই দুনিয়াতে তোমার কেউ না থাকলেও।আমি তো আছি তোমার আপু হয়ে।
তারা হাসে তাকে এক হাত দিয়ে জরিয়ে দরে বলে।
“আমি কারো দয়ার পাত্রী হয়ে চাই না আপু।
শরিফ তার দিকে তাকিয়ে বললো।
“বোকা মেয়ে নিজেকে দয়ার পাত্রী ভাবছো কেন।আমাদের ভাইয়া আর আপু মনে করলে তো হয়।
তারা কিছু বলতে নিবে তার আগে ধ্রুব তাদের থামিয়ে দিয়ে ঘড়ি দেখতে দেখতে বললো।
“এসব ড্রামা দেখার আমার সময় নেই।আমাকে যেতে হবে।
তারা অবাক চোখে তার দিকে তাকায়।মানুষটা এতো কঠিন কেনো।তার কি একটু সহানুভূতি আসছে না।তবে সাদিয়া ও শরিফ অবাক হলো না।যেনো তারা জানে এমন কিছু হবে।সাদিয়া তারার দিকে তাকিয়ে বললো।
“তাহলে ১ তারিখে উঠো।
“জি আপু।
সিয়াম নিজের পকেটে হাত দিয়ে একটা এক হাজার টাকার নোট বের করলো।তা তারার দিকে এগিয়ে দেয়,তারা প্রশ্ন বৃদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।ধ্রুব তার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো।
“তুমি আমার থেকে যে এক হাজার টাকা পেতে
ওইটা ধরো।
তারা বুঝলো ধ্রুবর আসল মতলব।তাই কোনো বাক্য ব্যয় না করে টাকা নিয়ে নিলো।তার সাথে তার জমানো তিন হাজার টাকা বের করলো।সব মিলিয়ে চার হাজার টাকা মিলিয়ে এডভান্স দিলো।এটা ঢাকার প্রতিটি বাসার নিয়ম। সাদিয়া মুচকি হেসে তার থেকে টাকা নিয়ে নিলো। ধ্রুব সকলের দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো।
“এবার আসি।
সাদিয়া তাড়াহুড়ো করে বললো।
“কি রে এখনি চলে যাবি।
“হ্যাঁ পলিটিক্স নিয়ে কিছু কাজ আছে।মিস তার-ছিড়া তুমি যাবে।
তারা উপর নিচ মাথা নাড়ে।
“তাহলে চলো।
ধ্রুব ও তারা তাদের থেকে হাসি মুখে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।বাড়ি থেকে বের হতেই ধ্রুব তারার দিকে তাকিয়ে বললো।
”এবার নিজের রাস্তা দেখে নেও।
তারা তার দিকে তাকিয়ে বললো।
“এসব কেনো করলেন।
ধ্রুব ভাবলেশহীন ভাবে বললো।
“আমি কলেজের নেতা,সেখানে কোনো ছাত্রী যদি কোনো সমস্যায় পড়ে তা দেখার দায়িত্ব আমার ।
“কিন্তু এখন তো আমি কলেজের ছাত্রী নয়,কলেজের বাহিরে আমি একজন সাধারণ মানুষ।
“সেটা কোনো বিষয় না,একটা মানুষ হিসেবে আমার কর্তব্য এটা।
“ওও আচ্ছা।
“হ্যাঁ যাও।
তারা চোখ ছোটো ছোটো করে। ধ্রুবর দিকে তাকায়।ধ্রুব হালকা ধমকের সুরে বললো।
“যাচ্ছ না কেনো।
তারা তার থেকে তাকিয়ে।যেতে যেতে বলতে লাগল।
“আপনাকে বুঝা বড়ো দায়।
ধ্রুব নিজের স্থান থেকে বলে উঠলো।
“তোমাকে বুঝতে কে বলেছে।
“আমার বুঝার কোনো ইচ্ছেও নেই।
” আমি তোমাকে বলছি এসো এসো
আমাকে বুঝো।
“আমি মনে হয় নাচতে নাচতে আপনাকে বুঝতে গেছি।
“হ্যাঁ তা দেখায় যাচ্ছে,তুমি আসলেই তার-ছিড়া।তোমার মাথার কিছু তার মনে হয় ছিঁড়ে গেছে।
তারা তার দিকে তেড়ে এসে আঙ্গুল তাক করে শাসিয়ে বললো।
“একদম আমাকে এসব নামে ডাকবেন না।
“তো কি বলে ডাকবো মিস তার-ছিড়া।
“আমি তার ছিড়া হলে আপনিও গুঁড়ো দুধ।
ধ্রুব তারার দিকে তাকিয়ে বললো।
“নিজের ভাষা সংযত করো ।
তারা ভেংচি কেটে বললো।
“করবো না।
“মিস তার ছিড়া যাও তো।
তারা নিজ মনে বকতে বকতে আবার হাটা দিলো।তার এখানে থাকার আর কোনো ইচ্ছা নেই। কলেজের দেরি হয়ে যাচ্ছে। কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। পিছে হয়তো কোনো মানুষের বেদনা দায়ক মন রেখে যাচ্ছে।যে তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তারা যেতেই ধ্রুব মৃদু হাসে যে হাসিতে কোনো প্রান নেই।ঠোঁটে হাসি রেখে বিরবির করে বললো।
“অল্পতেই এতো দূর্বল হয়ে পড়ো মেয়ে।জীবনে যে আরো পথ চলা বাকি এতিম দের যে অনেক লাথি ঘন্টা সহ্য করতে হয়।
________&________
তারা কলেজে ঢুকে কোনোদিকে না তাকিয়ে নিজের ক্লাসের দিকে যেতে নেয়।ক্ষিদা লাগছে তার,শরীরটাও মেজ-মেজ করছে।এতোটা পথ হেঁটে আসায় ক্লান্ত লাগছে।কি করবে অভাব যে তার পিছু ছাড়ে না।সেখানে রিক্সা দিয়ে আসা তো শুধু বিলাসিতা।নিজের ক্লাসে যাওয়ার আগে কোথা থেকে এক দল ছেলেমেয়ে আসলো।তারা মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো প্যান্ট সার্ট পড়া একটি মেয়ে।হয়তো বড়োলোক বাবার বখে যাওয়া সন্তান!(ফেসবুক পেজ : Romana Akter Monira – রোমানা আক্তার মনিরা) তারা তাদের দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বললো।
“কি সমস্যা রাস্তার মাঝে কেনো দাঁড়িয়ে আছেন।
সেই ছেলে মেয়ের থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলো।
“খুকি মনে হয় কলেজে নতুন,কোনো সমস্যা নেই।আমার পুরাতন করে নিবো।
তার কথায় তারার কপালে গাঢ় ভাঁজ পড়লো।সেই প্যান্ট শার্ট পড়া মেয়েটি।তাদের থামার ইশারা দেয়। এবং তারার দিকে তাকিয়ে শান্ত বললো।
“চলো আমার সাথে।
তারা তার কথায় নাকচ করে বললো।
“আমি কেন আপনার সাথে যাবো।
”যা বলছি তাই করো,বেশি কথা আমার পছন্দ না। follow me
বলেই হাটা দিলো।তার সাথে সেই চার পাঁচ জন ছেলে মেয়েও যেতে লাগলো।তারা মনে মনে ভিতু হলেও,তা প্রকাশ না করে সামনে হাটা দিলো।সেই ছেলে মেয়ে গুলো একটা ক্লাস রুমে প্রবেশ করে। এবং নিজ নিজ স্থান করে বসে পড়ে।তারা তাদের সামনে দাঁড়ায়।সেই প্যান্ট শার্ট পড়া মেয়েটি হয়তো তাদের দলের লিডার।মেয়েটি তারাকে ডাক দিলো।তারা তার সামনে দাঁড়ায়। মেয়েটি তারার দিকে তাকিয়ে বললো।
“কয়দিন এসেছো এই কলেজে ।
তারা তার দিকে তাকিয়ে বললো।
“জি ২০ দিন।
তার পাশে থাকা অন্য একটি মেয়ে ভেংচি কেটে বললো।
“২০ দিনেই কলেজে নেতার গায়ে হাত, বিষয়টা অনেক সুন্দর না মিম।
মিম তাদের দলের লিডার সে বিরক্ত হয়ে সেই মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো।
“মিলি তোকে চুপ থাকতে বলছি না,আমি দেখছি তো।
“কেনো চুপ থাকবো ও কি করছে ও জানে।
মেয়েটি এবার মৃদু স্বরে হুংকার ছাড়লো।
“তোকে বলছি চুপ থাকতে চুপ থাক।
মিলি চুপ হয়ে গেলো,তার সবকিছু এখন মাত্রারিক্ত লাগছে।মিম মুচকি হাসে,তারা এতো ক্ষন নিরব দর্শকের মতো সবটা পরিদর্শন করলেও।এখন তার বুঝতে বাকি নেই কে এই মিম।আর তার সাথে এখন কি কি হতে যাচ্ছে।তবে সেটা আমলে নিলো না,যার জীবন টাই একটা যোদ্ধ তার আবার এসবে কি যায় আসে।মিম নামের মেয়েটি ব্য্যান্স থেকে নেমে তার সামনে দাঁড়ায়। হেসে সকলের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে।
“মামনি কলেজে নতুন,তোরা কেনো চেতে যাস।
বলেই ক্লাসের দরজার সাথে লাগোয়া একটি লাঠি দিলো।তা নিজ হাতে বারি দিতে দিতে তার কাছে এসে বললো।
“নতুন এসেছো ভালো কথা,ধ্রুবকে থাপ্পড় দেওয়ার কি দরকার ছিলো।
তারা নিজ মনের সকল ভয় দূরে রেখে সাহস সঞ্চয় করে বললো।
“উনি নিজেই মেয়ে মানুষের গায়ে হাত তুলতে গিয়ে ছিলেন।তাই মেরেছি।
মিম তার দলের সকলের দিকে তাকিয়ে, নাটকীয় ভঙ্গিতে বললো।
“এই তো মামির মুখে বুলি ফুটেছে,তাহলে এবার আমার ডেমো দেখায়।
বলেই তারাকে মারতে নেয়,তারা চোখ বন্ধ করে ফেললো।তখনি কিছু ক্যাঁচ শব্দ হলো।হয়তো রুমে কেউ এসেছে তবে তা দেখার ইচ্ছা কারো নেই।তারা ব্যথা অনুভব করছে না, হঠাৎ কি হলো? সে পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে। ধ্রুব লাঠি ধরে আছে।মিম তারাতাড়ি তার থেকে লাঠি ছাড়িয়ে নিয়ে ফেলে দিলো।ধ্রুবর হাত টান দিয়ে কিছু দেখতে দেখতে তাড়াহুড়ো করে বললো।
“ব্যথা লেগেছে দেখি।
তারা বিস্ফোরিত নয়নে ধ্রুবর দিকে তাকায়। ধ্রুব মুচকি হেসে নিজের হাত টা মিমের থেকে ছাড়িয়ে নেয়।এক পলক তারার দিকে তাকিয়ে বললো।
“এসব ছাড়ো মিম আমার টা আমাকে বুঝতে দেও।
মিম জেদি কন্ঠে বললো।
“কখনোই ছাড়বো না,এই মেয়ে তোমাকে থাপ্পড় দিছে।আবার এই মেয়ের জন্য তুমি হাতে ব্যথা পেলে।
“আমার টা আমাকে বুঝে নিতে দেও।
“না দিবো না যে তোমাকে কিছু করবে তাকে আমি ধ্বংস করে ছাড়বো।
“তাহলে আমার শত্রুতার রাস্তায় যে আসবে।তার জন্য যে ব্যাপারটা সুখময় না তা বুঝে নিও।
বলেই সকলের সামনে তারা হাত ধরে বাহিরের দিকে হাটা দেয়।তারা এখনো তার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কি হচ্ছে যেনো তার মাথায় ঢুকছে না
______&_____
চলবে…