ঢাকা শহর মানেই এক শব্দের কারখানা। যেখানে সবসময় যান-বাহনের, মানুষের চিল্লাচিল্লি শব্দ থাকবেই। আর সেটা যদি হয় কোনো টিন-সেট বাসা তাহলে তো কোনো কথায় হয় না। একটি রং-চটা ফ্লেটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটি মেয়ে এই শহর করে পর্যবেক্ষণ করছে। মেয়েটি তার বাটন ফোনে দেখে এখন নয়টা বাজে, মেয়ে তারাতাড়ি বারান্দা থেকে চলে যেয়ে। একটি ব্যাগ বের করে যাতে। (সমাপ্ত-হীন প্রেম)
একটি রং-চটা সাদা শাড়ি, দুটো নতুন জামা, আর চার কে রং চটা থ্রি পিস ছাড়া কিছুই নেই। যার পৃথিবীতে আপন বলতেই কেউ নেই। তার আবার জামা আসবে কোথা থেকে। এসব ভেবে হেসে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে কিচেনে যেয়ে দেখে কালকের রান্না করা কিছু ভাত পড়ে আছে। মেয়েটা সেই ভাত ধুয়ে দিব্যি লবন দিয়ে মেখে খেয়ে ফেললো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৯:৫০ বাজে, এখান থেকে কলেজ যেতে আধ ঘন্টা লাগে। আর বাসে গেলে দশ মিনিট দরকার কি তাতে। শুধু শুধু দশ টাকা নষ্ট হবে। সেই ভেবে হেঁটে যেতে থাকলো। হাঁটতে হাঁটতে তার জীবনের সমীকরন মিলাতে থাকে। হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলো।বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে বললো।”এই আপনি কি চোখে দেখতে পান না।ব্যক্তি টিও বোধ হয় বিরক্ত হলো। বিরক্ত নিয়ে বললো।”নিজে চোখ কোথায় নিয়ে ঘুরো মিস কানা।নিজের এমন অদ্ভুত নাম শুনে মেয়েটি রেগে বললো।”এই আমার নাম কোনো মিস কানা না, আমার নাম তারা।ব্যক্তি টি হয়তো মজা পেলো।”ও তার মানে তোমার নাম তার-ছিড়া।”দেখুন মিষ্টার অনেক খারাপ হয়ে যাবে বলেদিলাম।”কি করবে অন্য একদিন করো এখন আমার অনেক কাজ আছে। বাই মিস তার-ছিড়া।বলেই লোকটি দৌড়ে চলে গেলো।তারা বিরক্ততে মাটিতে লাথি মারলো শেষে নিজেই ব্যথা পেয়ে বসে পড়লো।”দূর আজকে কার মুখ দেখে উঠলাম ভালো লাগে না।বলেই হাঁটা দিলো, কষ্ট তো তাকে পেতে হবে।তাও টাকা বাঁচাতে হবে এই মাসের ভাড়া না দিলে হয়তো বাড়ি ওয়ালা তাকে বাড়ি থেকেই বের করে দিবে।
তারা কলেজে ঢুকতে দেখে কিছু ছেলে মেয়ে মিলে একটা মেয়েকে ঘিরে আছে। তারা কিছু বোঝার জন্য একটু সামনে এগিয়ে গেলো। দেখলো একটা মেয়েকে একটা ছেলে থাপ্পড় মারতে নিচ্ছে। তারার হঠাৎ কি হলো সে জানে না। সে ছেলেটির কাছে যেয়ে তাকে টাস করে একটা থাপ্পড় মারলো। সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তাদের নেতার গায়ে কেউ হাত তুলতে পারবে। এটা যেনো তাদের কল্পনার বাহিরে। তারা বলা শুরু করলো।
“আপনার এতো বড়ো সাহস হয় কি করে একটা মেয়েকে অসম্মান করেন। জানি না মেয়েটা কি করেছে তবে তার মান-সম্মান নষ্ট করার অধিকার আপনাকে কে দিলো। মেয়েদের সম্মান করতে শিখেন নি।
ছেলেটি মুচকি হাসলো তারা কে দেখে বললো।
“ও মিস তার-ছিড়া আমি তো নাম টা তোমাকে এমনি দিয়েছি, এখন দেখি সত্যিই তোমার মাথায় সমস্যা আছে। চলে যাও এখান থেকে।
তারা যেনো ক্ষ্যাপে উঠলো। ছেলেটির দিকে আঙুল তাক করে বললো।
“আপনি কি করবেন আমিও দেখবো। সে আর যায় করুক, তবে তার সম্মান নষ্ট করার অধিকার আপনার থাকতে পারে না। বলেই মেয়েটির হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাঁটা দিতে থাকে, ছেলেটি দেখে মেয়েটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। হয়তো তখন একটু বেশি ব্যাথা পেয়েছিলো। ছেলেটি চিন্তায় এতোই ব্যস্ত যে তার পাশে যে কেউ তাকে ডাকছে সেদিকে তার খেয়াল নেই। তার পাশে দাঁড়ানো একটি ছেলে বলে।
“ধ্রুব এই মেয়ে তোকে থাপ্পড় দিলো তুই সহজে ছেড়ে দিবি, আর মিম জানতে পারলে তো এই মেয়ের খবর করে ছাড়বে। “ধ্রুব নামের ছেলেটি যেনো তার স-জ্ঞানে ফিরলো, তার পাশের ছেলের কাঁধে হাত রেখে বলে। “এই মেয়ে জানে না কাকে থাপ্পড় দিয়েছে, এতো সহজে তো আমি তাকে ছেড়ে দিবো না।”কি করবি তাহলে।”দেখ কি হয়।বলেই মুচকি হেসে তার ক্লাসে চলে যায়। তার পিছনে সেই ছেলেটিও চলে যায়।
তারা সেই মেয়েটি কে নিয়ে তার ক্লাসের দিকে যেতে থাকে, কারন এই মেয়েটাকে সে অনেক বার ক্লাসে দেখছে। মেয়েটি শর্ট-টপ ও জিন্স প্যান্ট পড়া দেখেই বোঝা যাচ্ছে। হয়তো কোনো বড়লোকের দুলালি হবে। ক্লাসে যাওয়ার আগেই কোথা থেকে তারার ব্রেষ্ট-ফ্রেন্ড আমেনা দৌড়ে আসে। এক পলক তারার দিকে তাকিয়ে আর এক পলক মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে।”তুমি ক্লাসে যাও সুমাইয়া, আমার তারার সাথে কথা আছে।মেয়েটি হেলতে-দুলতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। আমেনা তারার দিকে তাকিয়ে বললো।
“তুই জানিস তুই কি করেছিস।তারা শান্ত ভাবে বললো।
” যা করেছি বেশ করেছি। মেয়েটা যেই দোষ করুক এভাবে সবার সামনে থাপ্পড় মারবে এটা কেমন কথা।
“তুই জানিস ও কি করছে। তারা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে।
“কি করছে বল শুনি। “এই মেয়ে ধ্রুব ভাইকে প্রেমের প্রপোজাল দিছে, ধ্রুব ভাই রিজেক্ট করছে দেখে। তাকে হুমকি দিয়ে বলছে উনি যদি গ্ৰহন না করে। তাহলে সবাইকে বলবে উনি ওকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করছে এবং তার রাজনীতি ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিবে।
তারা অবাক হয়ে আমেনার দিকে তাকিয়ে বললো।
“তার মানে উনি সেই ধ্রুব।
আমেনা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো।
“হুম।
তারা কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো
“তুই আগে বলবি না, যে উনি সেই ধ্রুব আমাদের কলেজের নেতা।
আমেনা তারার দিকে তাকিয়ে বলে।
“তুই বলায় সময় দিছোস, আর যখন তুই এসেছিলি তখন ধ্রুব ভাই ঢাকা ছিলো না। তাই দেখিস নি। আজকে আসলো আল্লাহ জানে তোর কপালে কি আছে। আর যদি মিম আপু জানতে পারে, তাহলে তো তোকে মেরেই ফেলবে।
তারা আমেনার দিকে তাকিয়ে বললো।
“এই মিম আবার কে।”
“ধ্রুব ভাই কে পছন্দ করে পছন্দ বললে ভুল হবে।ধ্রুব ভাই এর আব্বুর অধিক সম্পদ এসব নেওয়ার জন্য নাটক করে।
“যতো সব চিপ মেয়ে মানুষ।
“হুম যা হবে পরে দেখা যাবে, এখন চল।
“হুম চল।বলে তারা দুইজন ক্লাসে চলে যায়।
{পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন}

One Comment