মেঘলা আকাশ অল্প স্বল্প বৃষ্টি পড়ছে। সেই বৃষ্টিতে ভিজে একটি রমনী রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, এ ছাড়া তার করার কিছু নেই। তাকে যে চাকরি করতে হবে নয়তো খাবে কি। আর একটু পড়াশোনা জানলে হয়তো এর থেকে ভালো চাকরি পেতো। কিন্তু এখন কি করার যা পেয়েছে তা নিয়ে বাঁচতে হবে। এসব ভেবে হাটছিলো তখনি একটি বাইক অনেক জোড়ে তার পাশ কেটে যায়, যা ধরুন রাস্তার সকল কাদার পানি তার শরীরে লেগে যায়। মেয়েটি ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে নেয়। যখন অনুভব করলো এখন আর কাদা পানি লাগছে না। তখনি মুখ থেকে ওড়না সরিয়ে সামনে তাকায়। সামনে তাকিয়ে দেখে। একটি ছেলে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিচ্ছে। মেয়েটি তার কাছে যেয়ে চিৎকার করে বললো।
“শুড়ো-দুধ এটা কি করলেন আমার পুরো জামা টা নষ্ট হয়ে গেলো।
ছেলেটি তার দিকে তাকিয়ে জয়ের হাসি দিয়ে বললো।
“ও কিউট তার-ছিড়া তোমাকে এভাবে কত কিউট
মেয়েটি খ্যাপে উঠলো।
“দেখুন আমার নাম তারা।|
ছেলেটি ভাবলেশহীন মুখে বললো।
“তাহলে তো আমার নামও ধ্রুব।
তারা ভেংচি কেটে বললো।
“সে যাই হোক আপনি রাস্তার পানি আমার শরীরে ফেললেন কেনো।
“তুমি আমাকে ভার্সিটিতে থাপ্পড় মেরেছিলে কেনো।
”কারন আপনি মেয়েটাকে মারতে যাচ্ছিলেন।|
“আমি মারতে যাচ্ছিলাম, আর তুমি আমাকে থাপ্পর মারছো। সো এটার সুদ-বাদ করে দিলাম।
“দেখুন অনেক খারাপ হবে।
ধ্রুব হাসতে হাসতে বললো।
“আগে নিজের অবস্থা দেখো তারপর আমার যা করার করো।
বলেই আবার হেসে উঠলো।
তারা যেতে যেতে বললো।
“আপনার কপালে বউ জুটবে না, শুড়ো-দুধ।
ধ্রুব হাসতে হাসতে বললো।
“না জুটলে, তুমি খুজে দিও।
তারা ভেংচি কেটে বলে।
“আমার ঠেকা পড়ছে হু।
বলে চলে গেলো। ছেলেটি হাসতে হাসতে বাইক নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। আজ এই বৃষ্টি দেখলো এক অদ্ভুত ঝগড়ার সম্পর্ক।কি হবে তার নিয়তি।
_____&_______
তারা তারাতাড়ি করে কাপড় চেঞ্জ আর ঘড়ি দেখছে। অনেক লেট হয়ে গেছে। আজকে অনেক বকা খেতে হবে। তারাতাড়ি পার্স নিয়ে দৌড় দিলো। পাঁচ মিনিটে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে দাড়ালো। কেস-কান্টারে একজন ব্যক্তি গম্ভীর মুখ করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যক্তি টি তাকে বললো।
“যদি চাকরি দরকার না হয় বলে দেও, আমি নতুন কাউকে দেখে নিবো।
তারা মাথা নিচু করে মিনমিন করে বলে।
“সরি স্যার এতো বৃষ্টি ছিলো, আর পড়ে গেছিলাম তাই বাসায় যেতে হয়েছে। আর ভুল হবে না।
“এই মেয়ে একদম বাহানা দিবে না, যাও গিয়ে দেখো কাস্টমার কি চাই। আর একবার এমন করলে চাকরিতে আসার দরকার নেই।
তারা মাথা নিচু করে একটু দূরে দাঁড়ানো একটা ছেলেকে বললো।
“সুমন কোন টেবিল থেকে অর্ডার নেওয়া বাকি।
সুমন নামের ছেলেটি তার দিকে তাকায়, সুমনের বড়া-বড়ি এই মেয়েটার জন্য মায়া হয়। কত কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহ করে। ছেলেটি তারা কে বললো।
“কিছু করতে হবে না শুধু ভেতরে যাও আর দেখো কার কি লাগবে।
তারা তাই করলো ভেতরে গেলো, সবাই সবার মতো খাচ্ছে হঠাৎ একটি ছেলের তার উপর নজর পড়ে ছেলেটি তাকে দেখেই বলে।
“ওই তার-ছিড়া।
তারা দেখলো একদম শেষে টেবিলে বসা ছেলেটি তার দিকে তাকিয়ে ডাকছে। সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে, তারা ছেলেটির কাছে যেয়ে বললো।
“দেখেন গুড়ো-দুধ আমি এখানে কাজ করতে এসেছি।প্লিজ কোনো ঝামেলা করবেন না।
ধ্রুব তারা দিকে তাকিয়ে বললো।
“তুমি এখানে কাজ করো।
তারা উপর নিচ মাথা নাড়ে ধ্রুব শয়তানি হাসি দিয়ে বললো।
“ওয়েটার যাও একটা হট কফি নিয়ে এসো।
তারা হয়তো এমন কথার জন্য প্রস্তুত ছিলো না তাই থতমত খেয়ে গেলো। তাই ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বললো।
“মানে কি
“তুমি তো বললে কাজ করো তো যাও কফি নিয়ে এসো।
তারা দাঁতে দাঁতে চেপে ধ্রুবর জন্য কফি আনতে চলে গেলো। মনে মনে ধ্রুবর ১৪ গুষ্টি কে গালি দেওয়া শেষ।
তারা ধ্রুবর কথা মতো এক কাপ হট কফি নিয়ে এলো। তা ধ্রুবর দিকে এগিয়ে দিলো, ধ্রুব তা নিয়ে শয়তানি হাসি দিলো। তারা সেখান থেকে চলে যেতে নিবে তখনি ধ্রুব বলে উঠলো।
” কোথায় যাচ্ছো।
তারা রাগ ও বিরক্তি নিয়ে, দাঁত কিরমির করতে করতে বললো।
“অন্য কাষ্টমারের কি লাগবে, তা দেখতে যাচ্ছি।
“ওও আচ্ছা, তাহলে আমার জন্য টিস্যু এনে দেও।
তারা বিরক্তি নিয়ে টেবিলের ডান পাশে রাখা টিস্যু বক্সে আঙ্গুল নিক্ষেপ করে বললো।
“ওই খানে আছে দয়া করতে নিয়ে নিবেন।
ধ্রুব কিছু বলতে উদ্বেগ নিবে তার আগেই রাগ নিয়েতারা চলে গেলো। তা দেখে ধ্রুব মুচকি হাসি দিলো। তার সাথে থাকা তার বন্ধু নয়ন তার হাসি দেখে জিগ্গেস করলো।
“তুই কি করতে চাইছিস বল তো।
ধ্রুব রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো।
“আগে আগে দেখো হতায়ে কেয়া।
নয়ন চোখ ছোটো ছোটো করে বললো।
“কোনো অকাজ করবি না তো।
ধ্রুবর মেকি হেসে বললো।
“আরে না, শুধু তাকে বুঝাবো। আমাকে থাপ্পর দেওয়ার ফলে কত প্রকার ও কি কি হতে পারে।
“তুই কোনো ভুল করছিস না তো।
“আরে না। বেশি কিছু করবো না দুই একটা শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দিবো।
“পানি যেনো বেশি দূর না গড়ায়।
“গড়াবে না খা তো।
নয়ন খাওয়া শুরু করলো। ধ্রুব একবার কফি খাচ্ছে একবার তারার দিকে তাকাচ্ছে। তারা আড়-চোখে তাকিয়ে আবার চোখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নিচ্ছে। এভাবে তাদের বেশকিছুক্ষন চললো। নয়ন আর ধ্রুবর খাওয়া শেষ। ধ্রুব তারার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
“ওয়েটার বিল প্লিজ।
তারা ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে ঠোট বেঁকিয়ে ভেংচি কেটে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর তারা আসলো তার হাতে একটা কাগজ তারা অন্য দিকে তাকিয়ে ধ্রুবর দিকে তা এগিয়ে দিলো। ধ্রুব তা নিয়ে পকেট থেকে টাকা বের করে তারার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো।
“এখানে একশো টাকা আছে, তোমার টিপস।
তারা তার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে বললো।
“আমি যার তার থেকে টিপস নেয় না।
ধ্রুব শয়তানি হাসি দিয়ে বললো।
“এতো দিন নেও নি এখন নিবে।
“আপনার মতো মানুষের থেকে আমি তারা মরে গেলেও টিপস নিবো না গুঁড়ো-দুধ।
“আচ্ছা তাহলে বেঁচে থাকতেই নেও তার-ছিড়া।
“পারবো না।
ধ্রুব কোনো বাক্য ব্যয় না করে, তারা হাতে টাকা টা দিয়ে ফিসফিস করে বললো।
“তোমার কাপড় নষ্ট করার রিটার্ন গিফট তার-ছিড়া।
বলেই ধ্রুব আর নয়ন চলে গেলো, তারা তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো।
“আমাকে কি তোর ফকির মনে হয়, শালা তোর
টাকার গুষ্টির তুষ্টি গালাই।
বলেই সেখান থেকে চলে গেলো টাকা রাখার জন্য।নয়তো ভদ্রলোক রেগে আবার চাকরি থেকে বের করে দিবে। কি এক জীবন আল্লাহ তাকে দিয়েছে সব সময় ভয় নিয়ে থাকতে হয়।
চলবে..