আমরা যারা প্রবাসী তাদের জীবন কেমন কাটে? এ প্রশ্নটার উত্তর অনেকেরই অজানা। এ নিয়ে কারও কারও রয়েছে বিশেষ কৌতূহল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যাঁরা প্রবাসী, একমাত্র তারা ছাড়া এই বিষয়ে কেউ বুঝবে না। বিশেষ করে যারা কখনো প্রবাসে আসেনি, তারা তো একেবারেই না। আর কৌতূহলটা তাঁদেরই বেশি যাঁদের আত্মীয়-স্বজন প্রবাসী। আমজনতার আগ্রহও যে নেই, তা নয়।
আমরা বাংলাদেশের প্রবাসীরা কেমন আছি? সোজা কথায় বলতে গেলে কীভাবে কাটছে আমাদের প্রবাস জীবন? দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের বাইরে থেকে আমরা কী খুব ভালো আছি? দেশ ও স্বজনদের দূরে রেখে আমাদের প্রবাসজীবন কী খুব স্বস্তিতে কাটছে? আমরা কি খুব ভাল আছি? নাকি সোনার হরিণের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আমরাও ক্লান্ত?
এই প্রশ্নগুলো করার পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। কেবল আমাদের সুখ-দুঃখ আর কিছু অনুভূতি শেয়ার করা মাত্র। কারণ, কারও কাছে জীবন মানে বিলাসিতা। কারও কাছে কোনোরকম বেঁচে থাকাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। হোক সে প্রবাসী কিংবা অন্য কেউ? প্রবাস মানেই নিঃসঙ্গতা, একাকিত্ব। প্রবাস মানেই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম? দেশের সবাইকে, পরিবারের সদস্যদের ছেড়ে তারা কি খুব ভাল আছে? নাকি ভালো নেই?
এই দূর প্রবাসে পরিবার, ভাই, বোন, বন্ধুবান্ধব সবাইকে রেখে ঈদ কাটানো যে কতটা বেদনার ও কষ্টদায়ক তা একজন প্রবাসী ছাড়া অন্য কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব না। কেউ বুঝবেনা, প্রবাসীদের ঈদ বলে কিছুই নেই। চাঁদ রাতে আছে শুধু ১২ থেকে ১৬ ঘন্টা ডিউটি করে রুমে এসে ক্লান্ত চোখে লম্বা একটা ঘুম।
প্রবাসীদের কোন চাহিদা নেই। তারা শুধু পরিবারের চাহিদা মিটাতে মিটাতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। পরিবারের সবার কাছেই প্রবাসী মানে অফুরন্ত টাকার একটা মেশিন। পরিবার কখনোই জিজ্ঞাস করেনা, যে আমাদের চাহিদা তো সব মিটালি কিন্তু, তোর কিছু চাহিদা আছে কিনা। এই কথা বলার মত কেউ প্রবাসীদের নেই।
প্রবাসীদের আছে শুধু বুক ভরা কষ্ট। আরও অনেক অভিযোগ, যা তারা কাউকে বলতে পারেনা। তারপরও একজন প্রবাসী সবসময়ই চায় তার পরিবার, তার প্রিয়জনরা হাসিখুশিতে ঈদ উদযাপন করুক। একটা ভালো মুহূর্ত উপহার দেয়ার জন্য আমরা প্রবাসীরা নিজের জীবন থেকে সব ভোগ, আকাঙ্ক্ষা কোরবানি করে দেই।
যারা প্রবাসী নন, তাদের ধারণাটা কেমন প্রবাসীদের সম্পর্কে? এটা আমার পক্ষে বলা মুশকিল হলেও কিছুটাতো উপলব্ধি করতেই পারি। তাই বলছি। যত দূর উপলব্ধি করেছি, প্রবাসী সম্পর্কে অপ্রবাসীদের ধারণা পুরোটাই অর্থকেন্দ্রিক। অর্থাৎ, প্রবাসী মানে অঢেল অর্থ উপার্জনের কারিগর। স্বজনেরা অন্তত ওই একটি বিষয়ে পরোপুরি সজাগ। প্রবাসী মানে, থাকবে অর্থিক সচ্ছলতা। এই ধারণাটা মোটেই ভুল নয়। আর এটা নতুন কিছু নয়। এটা তো ঠিক বাংলাদেশের সমৃদ্ধ অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর চাবিকাঠি তো দীর্ঘকাল ধরেই প্রবাসীদের নিয়ন্ত্রণে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বছর ঘুরে গুনছে হাজার কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা! তাই বুঝতে কারও কষ্ট হয় না, প্রবাসী মানে হাড়ভাঙা পরিশ্রমী একদল খেটে খাওয়া মানুষ। প্রবাসীদের রকমফের আছে। এই রকমফের অবশ্য অঞ্চলভিত্তিক। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবাসীদের যাত্রা ভিন্ন ভিন্ন কারণে। কেউ আসছে অর্থ উপার্জনের জন্য। এদের অনেকেই দক্ষ। কেউ অদক্ষ। কেউ আসছে উচ্চশিক্ষার্থে। এদের কেউ দীর্ঘমেয়াদি। আবার কেউ স্বল্প সময়ের জন্য। উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন এরা সবাই প্রবাসী। সবাই চলছে ওই আর্থিক স্বচ্ছলতা নামক সোনার হরিণের পেছনেই৷ আর আছে একটাই লক্ষ্য। সেটা হলো, দীর্ঘ সময় হাড়ভাঙা খাটুনি করেও একটা সময় হয়তো স্বজনদের নিয়ে যদি কিছুটা ভালো থাকা যায়। বিদেশে আমাদের একমাত্র পরিচয় আমরা বাঙালি। আমরা হতবাগা প্রবাসী।
হতভাগা বলার কারন হলো, আমরা যখন বিদেশে থাকি, তখন দেশের একজন মানুষ পেলে তাকে বড়ই আপন মনে হয়। তাদের সাথে অনেক সুখ দুঃখের কথা শেয়ার করি। কিন্তু যতই যা করি, দিনশেষে আমাদের প্রাপ্তি কখনও কখনও পূরণ হয় না। কখনও আমরা দীর্ঘদিন খেটে দেশে আসার পর দেশে আসলে দেশে ঢোকার সময় থেকেই পাই চরম ভোগান্তি আর লাঞ্ছনা। সরকারি অফিসারদের কথা কি বলবো, আমরা কেউ কেউ পরিবারের কাছ থেকেইতো পাই লাঞ্ছনা। কখনও কখনও পরিবারের অস্তিত্বই খুঁজে পাই না।
হতভাগা হলেও আমাদের চাওয়া একটাই। সেটা হলো, আমাদের পরিবারের সবাই ভালো থাকুক। আমার দেশের সবাই ভালো থাকুক। তাই সব দুঃখ-কষ্টকে বুকের মাঝে কবর দিয়ে, একবুক অনিশ্চিত আশা নিয়ে, একটা মেকি হাসি হেসে সবাইকে জানাই “ঈদ মোবারক”।
লেখা-
দুবাই থেকে জে. এস. সাকিব।
কি যে বলবো বলার মত ভাষা নেই,,, প্রত্যেকটা কথা একদম বাস্তব,,, প্রবাস জীবনটা বড় কষ্টের,,, কখনো এরকম ভাবে চিন্তা করি নাই ভাই,,,