Close

আলোক দ্বার


জেরিন জাহান দিশা


কুষ্টিয়া জেলার খলিশাকুন্ডি গ্রামে বাস করতো দুই বন্ধু এরা যেন কেউ কাউকে ছাড়া বাঁচতেই পারেনা। এদের একজনের নাম কামরুল আরেক জনের নাম আনিচ। কামরুলের বাড়ির পাশে একজন সাধক বাস করতো যার নাম রব সাঁইজি।রব সাঁইজির ভালো নাম লবান শাহ ।রব সাঁইজির অনেক ভক্তবৃন্দ আছে। ভক্তবৃন্দরা গুরুকে খুব ভালোবাসেন। প্রায় প্রতিবছরই সেখানে অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠান দেখতে সেখানে দেশী
মানুষের থেকে বিদেশী মানুষের আনাগোনা বেশি। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে সাধক রব সাঁইজি মারা যায়।গুরু মারা যাওয়াতে ভক্তবৃন্দরা ভেঙে পড়ে। আশ্রমের সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ে আনিচের হাতে।গুরু মারা যাওয়ার পর
আনিচ সহ সকল ভক্ত বৃন্দরা গুরুকে স্মরন করে জ্যোতি ধামে অনুষ্ঠান করে।আনিচের প্রিয় বন্ধু কামরুল সে এসবে বিশ্বাস করেনা। তার কাছে ৫ওয়াক্ত নামাজ আর রোজায় সব
গান বাজনা গুলো হচ্ছে হারাম।আনিচ একদিন তার গুরুর কবরের পাশে বসে ছিল।
সেখানে কামরুল উপস্থিত হয় । কামরুল আনিচ কে বলে তুমি কেন এইসবে বিশ্বাসী
তুমি জানোনা এই সব গান বাজনা শিরকী।আনিচ মুচকি হেসে বলে । শোন এই সব গান না আল্লাহর কালাম। একটু ধৈর্য নিয়ে শুনবে ঔই কালামের ভিতর কি বলতে চাচ্ছে। কামরুল বলে ওসব আমি শুনতে চাইনা। তুমি
নিয়মিত ৫ওয়াক্ত নামাজ পড়ে আল্লাহকে ডাকবে। তখন আনিচ বলে তোমাকে আমার
একটা কথা বলার ছিল । কামরুল বলল,আচ্ছা বলো ।আনিচ বলল এই যে
তুমি নামাজের আগে অজু করো।এই অজু করলে তো শরীরের নোংরা দূর হয়। মনের নোংরা কিভাবে দুর হবে।সেটা আমাকে বলবে। কামরুল আনিচের কথা শুনে আরো রেগে যায়।বলে তুমি পথভ্রষ্ট হয়ে গেছো। ধর্মে
কোথাও নেই যে গান বাজনা করতে হবে।আনিচ হেসে বলে শোন‌ বন্ধু সবকিছু এতো
ধর্মে খুঁজি কেন? কিছু জিনিস অনুভবের বিষয়। আমার সাঁইজি কোনদিন কারো ক্ষতি করে নাই মানুষকে ভালোবাসতে বলেছেন।সেটা কি খারাপ? আল্লাহ আমাদের একটা উছিলা পাঠাইছে যার হাত ধরে আমরা সহজ
সরল পথটাই চলতে পারি। তুমি তোমার মতো নামাজ রোযা করো এতে আমার কোন আপত্তি নেই।কারন তুমি এটা সম্পর্কে ভালো জানে এটাই তোমার কাছে সঠিক। তুমি যেই ধর্ম পছন্দ করোনা কেনো।হিংসা নিন্দা কারো গিবত এইসব থেকে বিরত থাকবে।শোন কেউ কারো পাপের ভার বহন করবেনা।তাই
তুমি জীবনটাকে সুন্দর ভাবে গুছিয়ে চলাফেরা করো। কামরুল তার বন্ধুর কথাই
রাগে গজগজ করতে করতে বাড়ি চলে গেলো।রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকলো
আনিচের কথা। হঠাৎ স্বপ্নে কামরুল দেখে
যে এক দরবেশ তাকে বলছে অনুমান অনুসরন কারী কখনোই সত্যের সন্ধান পাইনা।তুই যদি সত্যিই ধার্মিক হতে চাস তাহলে আমার আশ্রমে আয়।এসে দেখে যা
তুই এতো গান বাজনা ঘৃনা করিস ।সেই গানের ভিতর খারাপ কিছু আছে কিনা।স্বপ্নটা
দেখে কামরুলের ঘুম ভেঙ্গে যাই।সকালে সে
আনিচের কাছে গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলে।আনিচ বলে আমার গুরুর বাড়িতে অনুষ্ঠান
চলো তোমাকে সেখানে নিয়ে যাবো।আমিও
দেখবো কেন এতো বিরোধিতা করো তুমি।
সেদিন সন্ধ্যায় আনিচ তার বন্ধু কামরুল কে সাথে নিয়ে গুরুর বাড়িতে যাই।দুই বন্ধু গান
শোনো। এবং শেষ রাতের দিকে ধর্মীয় আলোচনা হয়।ঔই আলোচনা শুনে কামরুলের ভালো মন্দ দিকটা জেগে ওঠে।
কামরুল যেন একমুঠো আলো সেখানে খুঁজে
পাই।আনিচ কে কামরুল বলে বন্ধু আমরা
যারা সুফিবাদী বিশ্বাস করিনা।সুফিবাদিদের
নানা ধরনের খারাপ কথা বলি।এটা ঠিক করিনা। ধর্মের যে সদর এবং বাহির দিক থাকে এটা আমরা বুজতেই চাইনা।আর অর্ধেক জিনিস আমরা মানুষের মুখের কথাই
বিশ্বাস করে নানা ধরনের গীবত শুরু করি।
যেটা একদম ঠিক না। সত্যি মিথ্যে যাচাই না
করে ভালোমানুষকে ও আমরা অবহেলা করি
হাসাহাসি করি।এই যে আমি এতো গান বাজনা কে ঘৃনা করতাম। আমি তো আজ
তোমার সাথে সারারাত থাকলাম খারাপ কিছু
পাইলাম না গানের ভিতর। বন্ধু আমি ভুল
করেছি তোমাকে কটু কথা বলেছি আমাকে
ক্ষমা করো।আর আমি এখন থেকে ধর্মের সদর বাহির বোঝার চেষ্টা করবো।আমি যে
নামাজ পড়ছি এটা অহংকার করে কারো কাছে বলব না।কারন অহংকারী কে আল্লাহ
পছন্দ করেনা।এখন‌ থেকে আমি নামাজ রোজা ও করবো আর এই জ্যোতি নামেও
আসবো।এই জ্যোতি ধাম আর তোমার কাছে
আমি কৃতজ্ঞ তোমরা আমার মনের ভিতর যেন আলো সৃষ্টি করলে। আর স্বপ্নে যে দরবেশ আমাকে পথ দেখালো তাঁকে ধন্যবাদ
জানাই। তারপর দুই বন্ধু এক হয়ে গেলো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Leave a comment
scroll to top