Close

জিবন‌ দিয়ে ভালোবাসার প্রমাণ

 জিবন দিয়ে ভালোবাসার প্রমাণ

জেরিন জাহান দিশা

আগামীকাল বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।সব প্রেমিক -প্রেমিকাদের কতো প্ল্যান এই দিনটা নিয়ে। নাদিয়া আর আকাশ প্ল্যান করে তারা ১৪ই ফেব্রুয়ারি সারাদিন একসাথে ঘুরবে।সিনেমা দেখবে। রেস্টুরেন্টে যাবে।তাই ক্যাম্পাসে বেশিক্ষণ না থেকে বাড়ি চলে আসলো ওরা.. রাত তখন ১২টা। একটা অপিরিচিত নাম্বার থেকে ম্যাসেজ আসলো নাদিয়ার ফোনে। ম্যাসেজে লেখা”দরজাটা খোল”!
নাদিয়া ভাবে হয়তো ভুল করে তার নম্বরে ম্যাসেজটা চলে এসেছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আরেকটা ম্যাসেজ আসলো!
তাতে লেখা”ভয় পাসনা, দরজাটা খোল!”এবার নাদিয়া কিছুটা বিরক্ত নিয়ে দরজা খুললো। দরজা খুলে নাদিয়া দেখলো দরজার সামনে একটা কাগজের টুকরো পড়ে আছে। নাদিয়া এবার কিছুটা এক্সাইটেড হয়ে কাগজের টুকরোটা হাতে নিলো সেখানে লেখা”একবার ছাদে আস্তে পারবি?”নাদিয়া কি মনে করে ছাদের দিকে আগাতে থাকে।
ছাদে পৌঁছে নাদিয়া তো পুরো থ হয়ে গেলো! সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা! ছাদের ওপর হাজার হাজার কাগজের খাম তাতে লেখা “ভালোবাসি” “ভালোবাসি” অচেনা নম্বর থেকে আরেকটা ম্যাসেজ এসেছে “ভালোবাসি” “ভালোবাসি”এবং “ভালোবাসি”!
এভাবে কেউ সারপ্রাইজ দেবে নাদিয়া কখনোই ভাবেনি। নাদিয়া মনে মনে ভাবছে আকাশ আসলেই একটা পাগল
নাহলে এভাবে কেউ পাগলামী করে। ১৪ই ফেব্রুয়ারি সকাল ১০:০০টা।
হ্যালো! আপনি কি নাদিয়া বলছেন?
নাদিয়া:হ্যা বলছি
আসলে…
কিইইইই…
নাদিয়া এখন হসপিটালে বসে আছে। ফোনটা হাসপাতাল থেকেই এসেছিল। আকাশের বাইক এ্যাকসিডেন্ট হয়েছে! আকাশ নাদিয়ার সাথে দেখা করতে আসছিল। ভালোবাসা দিবসের জন্য কতো প্ল্যান ছিল দু’জনের করতো সবকিছু শেষ হয়ে গেলো। আকাশের অবস্থা খুবই খারাপ। আকাশের বাবা-মা ও বন্ধুরা সবাই চলে এসেছে।সবার চোখে পানি। ডাক্তার বলছে আকাশ কে বাঁচানো কঠিন। প্রচুর পরিমাণে ব্লিডিং হচ্ছে,মাথা এবং উদরের পিছনের অংশে যেখানে কিডনি থাকে সেই জায়গাটাতে মারাত্মক আঘাত লেগেছে।
আকাশের বাবা ডাক্তার কে বলল,রোগীর কি অবস্থা? ডাক্তার বলল, রোগীর আঘাতটা খুব‌ই গুরুতর। রিপোর্ট
হাতে পাওয়া না পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আকাশের বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, আমার ছেলে ঠিক হয়ে যাবে তো। ডাক্তার বললেন, আল্লাহ কে ডাকুন আর আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করবো আকাশ কে সুস্থ করতে। রিপোর্ট চলে
আসে প্রায় ৪০মিনিট পর আকাশের দুই চোখ এবং দুই কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। এ্যাক্সিডেন্টে দুই কিডনিই নষ্ট হ‌ওয়া
খুব‌ই রেয়ার ঘটনা। আকাশের ভাগ্যটা হয়তো খারাপ ছিল।

আকাশকে এখন লাইফ সাপোর্টে আনা হয়েছে। ডাক্তার বলেছে ১ঘন্টার মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে।নাহলে
আকাশ কে বাঁচানো যাবেনা।সবাই যার যার মতো চেষ্টা করছে কিন্তু কিডনী পাওয়া এতো সহজ না।আর কিডনী পেলে তো হবে না রক্তের গ্রুপ ও মিলতে হবে। আকাশের মা বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে নাদিয়া ও প্রায় পাগল
হয়ে গেছে। তানভির, জুনাইদ,তাওসির সামিয়া সবাই পাগলের মতো কিডনীর খোঁজ করছে কিন্তু কোথাও পাচ্ছেনা।এমন সময় ডাক্তার এসে বললেন, আপনাদের কপাল খুব‌ই ভালো নাহলে এতো কম সময়ে কিডনি চোখ
পাওয়া সম্ভব না। আকাশের মা বলল, ডাক্তার সাহেব কে এই মহান ব্যক্তি?আমরা সবাই তাকে দেখতে চাই।
ডাক্তার বলল,না উনি কাউকে দেখা দেবেন না।আমরা এ‌খন‌ই অপারেশন শুরু করবো।সবাই দোয়া করুন যাতে সফলভাবে অপারেশন শেষ হয়। আল্লাহর অশেষ রহমতে অপারেশন শেষ হয়।আকাশকে বেডে দেওয়া হয়। ডাক্তার বললেন আকাশ পুরোপুরি সুস্থ না।তাই একে একে আকাশকে দেখতে যাবেন। কিন্তু কেউ কথা বলা বেন
না ।সবাই একে একে দেখে এলো আকাশকে। নাদিয়া ১০দিন পর ভার্সিটিতে গেছে। তানভির জুনাইদ তাওহিদ
সবাই এসেছে। কিন্তু মাহিনের কোনো খোঁজ নেই। একবারে আকাশকে দেখতে যাইনি হাসপাতালে।তাই নাদিয়া ভীষণ রেগে আছে মাহিনের ওপর। ক্লাস শেষে সবাই আড্ডা দিচ্ছে।
একটা ছেলে এসে বলে এখানে নাদিয়া আপু কে? নাদিয়া বলে আমি । ছেলেটি নাদিয়া কে বলে মাহিন ভাই
এই ডায়রিটা আপনাকে দিতে বলেছে। নাদিয়া কিছুটা অবাক হয় মাহিনের নাম শুনে।আবার কিছুটা রাখো হয়।ভাবে এতো দিন খোঁজ না‌ নিয়ে এখন ডাইরি পাঠিয়ে ভাব মারছে। অকৃতজ্ঞ কোথাকার!ডাইরিটা সবার সামনে জোরে জোরে পড়া শুরু করলো নাদিয়া।ডাইরিতে লেখা যেদিন কলেজে প্রথম নাদিয়াকে দেখেছি সেদিন‌ই খুব ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু কখনোই নাদিয়াকে বলতে পারিনি।কারন আকাশ নাকি নাদিয়া কে ভালোবাসে।তাই আমি দূর থেকে
ভালোবাসি নাদিয়াকে। নাদিয়াকে দেখলেই আমার মনটা এক অন্যরকম শান্তি লাগতো। যখন শুনলাম আকাশ এ্যাক্সিডেন্ট করেছে আর নাদিয়া প্রায় পাগল। আকাশের বাবা মা সহ অসুস্থ তখন আমি নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না। দৌড়ে ডাক্তারের কাছে এলাম।এসে শুনতে পাই কোথাও নাকি কিডনী চোখ মিলছে না।তাই আমি
ডাক্তারের সাথে কথা বলি। ডাক্তার কে বলি আমি কিডনী চোখ দেবো কিন্তু কেউ যেন জানতে না পারে।আমি তোর
কষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম না নাদিয়া।তাই ঠিক করি আমি আমার শরীরের কিডনী চোখ আকাশ কে দেবো।আর
আমার আকাশকে দেওয়া চোখ দিয়ে তোর ওই হাসিমুখটা দেখবো।চিঠি পড়ে নাদিয়ার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।বাদ বাকী বন্ধু বান্ধবীদের একি অবস্থা। চিঠির লাস্ট অংশে লেখা ছিলো নাদিয়া তোকে তো কোনদিনই বলতে পারলামনা আমি তোকে ভালোবাসি।তাই এই ডায়রিতে লিখে দিলাম। আর হ্যাঁ আমি তো বেঁচে থাকব না।তাই তুই আমার করেছে
আসবি আর অনেকগুলো গোলাপ ফুল দিবি।এই চিঠি পড়ে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো নাদিয়া সবাই ছুটে
চলল মাহিনের কবরে।এক বছর পর ১৪ই ফেব্রুয়ারি। তাই আকাশ ও নাদিয়া কবরের দিকে যাচ্ছে গোলাপ ফুল নিয়ে। নাদিয়া আস্তে করে ফুলটা মাহিনের কবরে রাখলো। চোখের পানিগুলো আজকে বেঈমানি করছেনা।অঝোরে
ঝরে পড়ছে ।কাঁদছে আঁকাশো।

নাম: মোছাঃ শিরিনা খাতুন সম্পর্ক:মাতা গ্রাম: বড়বাড়ীয়া পুরাতন হাট পাড়া থানা: মিরপুর জেলা: কুষ্টিয়া মোবাইল:01743281966

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Leave a comment
scroll to top