জেরিন জাহান দিশা
আমি ফাহিম তানভীর এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। জীবনে একটা নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছিল কলেজে এসে। নতুন বন্ধু, নতুন ক্লাস আর নতুন একটা অনুভব যেটা আগে কখনো হয়নি।প্রথমদিনই ওকে দেখেছিলাম, রুপা।বাংলা বিভাগের ছাত্রী। ছিপছিপে গড়ন,সাদা- ছিপা মুখ আর চোখজোড়া যেন কথা বলে।প্রথম দেখাতেই মনটা কেমন করে
উঠলো। সেই থেকে রোজ সকালে কলেজে আসার একটা বাড়তি আগ্রহ কাজ করতো-ওকে দেখার।কখনো করিডোরে, কখনো লাইব্রেরিতে, কখনো ক্যান্টিনে।দূর থেকে তাকিয়ে থাকতাম। সে হয়তো টের পেতো,হয়তো পেতো না। আমি শুধু নিজের মধ্যেই গুটিয়ে থাকতাম। বন্ধুরা বলতো,”তুই এতো চুপচাপ কেনো?আমরা সবাই লক্ষ্য করছি তুই মেয়েটার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছিস।তুই এক কাজ করো মেয়েটার সামনে
গিয়ে কথা বলে হয়। ফাহিম বলল,কি যে বলিস তোরা আমার সাহসে কুলাচ্ছে না ।ভয়
করছে খুব। বন্ধুরা সবাই ফাহিমের কথা শুনে হেসে কুটিকুটি। ফাহিম বন্ধুদের হাসি দেখে একটু লজ্জা পেলো!কলেজ শেষ করে ফাহিম
বাড়ি ফেরে।রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে যেভাবে হোক আমি মেয়েটার সাথে কথা বলবো।পরের দিন সকালে ফাহিম তার প্রিয় বন্ধু জুনাইদ এর সাথে পরামর্শ নিলো । কিভাবে মেয়েটার সাথে কথা বলবে। জুনাইদ
বলল, তুই মেয়েটিকে ফলো কর। তারপর বুকে সাহস নিয়ে। মেয়েটির সাথে কথা বল।
ফাহিম মেয়েটিকে ফলো করছিল। মেয়েটি তার বান্ধবীদের বলছিল যে চল আমরা লাইব্রেরিতে যাবো। ফাহিম মেয়েটি যাওয়ার আগে লাইব্রেরিতে গিয়ে একটা বই নিয়ে।বইটি মুখের সামনে ধরে বই পড়ার ভান করছিল।মেয়েটি আসলো এসে ফাহিমের চেয়ারে বসলো। ফাহিম একটুখানি মেয়েটির দিকে তাকালো।মেয়েটিও তাকালো আর মুচকি হাসি দিলো। ফাহিমের পাশে যখন মেয়েটি বসেছিল বুকের ভিতর ধুকপুক শুরু
হয়ে গেছে।সমস্ত শরীর যেন ঘেমে একসার।
মেয়েটি ফাহিমকে বলল,আমি রুপা আপনার নাম জানতে পারি আমি ফাহিম। ফাহিম বলল
আপনি কোন ডিপার্টমেন্ট রুপা বলল,আমি বাংলা ডিপার্টমেন্ট।ফাহিম বলল,আমি ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের। তারপর রুপা বলল,
আচ্ছা বাই ভালো থাকবেন আমার পড়া শেষ। ফাহিম মেয়েটির চলে যাওয়া আড় চোখে দেখলো। ফাহিমের বন্ধুরা লাইব্রেরিতে এসে ফাহিমকে বলল,কিরে কথা হলো। ফাহিম বন্ধুদের জড়িয়ে ধরে বলল,হ্যা নাম আর কোন ডিপার্টমেন্ট এটা জানতে পেরেছি।
সবাই এটা নিয়ে অনেক মশকরা করতে থাকে।কলেজ শেষ সবাই বাড়ির দিকে রওনা
দিচ্ছে। ফাহিম সবসময় যেন রুপা কে দেখছে
কল্পনাতে।মনে হচ্ছে সবসময় যেন রুপা তার পাশেই আছে।রাতে পড়াশুনায় মন বসছে না
কিছুতেই।রুপার হাসি মুখটা ভেসে আসছে।
ফাহিম সকাল সকাল রেডি হয়ে কলেজের
দিকে রওনা দিলো। রুপার জন্য ফাহিম অপেক্ষা করছিল কিন্তু কোথাও রুপার দেখা
মিলছেনা।রুপা কে দেখতে না পেয়ে ফাহিম তো পাগল হয়ে যাচ্ছে। ফাহিমের এই অবস্থা দেখে বন্ধুরা বলল, শোন হয়তো ও অসুস্থ আছে তাই হয়তো আসছেনা।আর এভাবে
দাঁড়িয়ে থেকে সময় নষ্ট করিস না।ক্লাসের লেট হচ্ছে। ফাহিম তার বন্ধুদের সাথে ক্লাস করতে গেলো।ক্লাসে স্যার এসেছে ।সবাই
মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছে। কিন্তু ক্লাসে তার
মন নেই। ফাহিম সারা ক্লাস মুখটা ভার করে
থাকলো। ফাহিমের যেন চিৎকার করে কান্না
করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছেনা। ফাহিম ক্লাস কোনমতো করেই বাড়ি ফিরে আসলো।
ফাহিম বাড়ি এসে না খেয়ে শুয়ে পড়লো।রাত
শুয়ে ঝটফট করতে লাগলো। সকালে কলেজে গেলো। রুপার রুমে গেলো কিন্তু কেউ আসেনি। ফাহিম নিজের রুমে এসে বসে পড়লো। কিছুক্ষণ পরে জুনাইদ হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল, ফাহিম কিছু শুনেছিস
ফাহিম বলল,হাপাচ্ছিস কেন! জুনাইদ বলল,আমি রুপার বান্ধবীর সাথে কথা বললাম। ওদের জিজ্ঞেস করলাম রুপা কেন
আসছেনা কলেজে ।ওরা বলল,রুপা ওর
নিজ দেশের বাড়িতে চলে গেছে। ওখানেই ভর্তি হয়ে ক্লাস করবে। ফাহিম যেন কথাটা শুনে তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফাহিম
মুখটা ভার করে বসে পড়লো। বন্ধুরা বলল,
চল তোকে ক্লাস করতে হবেনা। বন্ধুরা সবাই সান্তনা দিলো।বলল,চল একটা কাজ করি
রুপার বান্ধবীদের কাছ থেকে ওর মোবাইল নম্বরটা নিয়ে রাখি। ফাহিম বলল,দেখ দেই নাকি। জুনাইদ রুপার প্রিয় বান্ধবীর কাছে গেলো এবং সব ঘটনা খুলে বলল, রুপার বান্ধবী বলল, ফাহিম ভাইয়া কোথায় জুনাইদ বলল,চলো আমার সাথে। রুপার বান্ধবী ফাহিমের কাছে আসলো এসে বলল,ভাইয়া আপনি অনেক দেরি করে ফেলেছেন। রুপার
কয়দিন পরেই বিয়ে এইমাত্র ওর সাথে কথা
হলো। রুপার হবু বর লন্ডনে থাকে। বিয়ের পর বরের সাথে লন্ডনে পাড়ি দেবে। ফাহিম যেন এই কথা শুনে মাথায় তার আকাশ ভেঙে পড়লো। রুপার বান্ধবী বাড়ি ক্লাসে চলে গেলো। ফাহিম অনেক কান্নাকাটি করতে লাগলো জুনাইদ কে বলল,আমি যদি সেদিন
রুপাকে বলতাম আমি তাকে পছন্দ করি এটা
যদি বলে দিতাম।তাহলে আজ এই রকম পরিস্থিতি হতো না। ফাহিম জুনাইদ কে বাড়ি
নিয়ে গেলো।ওকে সান্তনা দিতে লাগলো। জুনাইদ অনেকক্ষন ফাহিম কে সঙ্গ দিয়ে
বাড়ি চলে আসলো। ফাহিম মনে মনে বলতে লাগলো।এ যেন আমার নিরব ভালোবাসা। অত্যন্ত একান্তই আমার একার।