ফারজানা ফাউজিয়া মুগ্ধতা
শান্ত পেশায় যে স্কুলের শিক্ষক, ১৫ বছর বয়সী মিতুল ঐ স্কুলে এবছর নবম শ্রেণিতে ভর্তি হলো। পরিবারের কেউ মিতুলকে অযত্নে রাখে না। তার খরচপত্র বহন করে। তবে, পরিবারের ভালোবাসা সে পায় না। মিতুলকে মানসিকভাবে প্রচুর কষ্ট দেয়। ছোট্ট মিতুল বুঝতে পারে না কেন এমন হয় তার সাথে! সে খরচ চায় না। সে যে আদর আর ভালোবাসা ভীষণভাবে চায়। একাকিত্ব ও নীরবতাপ্রেমী হলেও মিতুল টিফিনটাইমে শান্তকে প্রচুর জালাতন করে। শান্ত হাসিমুখে সব সহ্য করে। অদৃশ্য কিছু তাকে বাঁধা দিতে দেয় না।
মিতুল আর শান্ত কেউই জানে না, তারা আসলে নিজের ভাই-বোন।
মিতুলের বয়স যখন মাত্র ছয় মাস, তখন শান্ত বিকেলে মিতুলকে নিয়ে বেড়াতে যায়। রাস্তা হারিয়ে ফেলে শান্ত। শান্ত দেখতে পায় ছিনতাইকারীরা এগিয়ে আসছে তার দিকে। মুহুর্তেই বিভ্রান্ত হয়ে যায় শান্ত। কি করবে শান্ত, কিছু বুঝে উঠতে পারে না। একপাশে তাকাতেই শান্ত দেখতে পায়, প্রবাহমান অগভীর নদী। সেই নদীর এক পাশে সারি সারি সাদা কাশফুলের আড়ালে বোনকে লুকিয়ে রাখে সে। তারপর রাস্তায় যায়। ছিনতাইকারীরা শান্তর থেকে টাকাপয়সা নিয়ে চলে যায়। বোনকে নিতে যেয়ে দেখে বোন নেই। থাকবে কী করে! এক লোক যে মিতুলকে নিয়ে চলে যায়। কিছুক্ষণ আগেই তার স্ত্রী মৃত মেয়ে জন্ম দিয়েছে। লোকটি আরো মনে করে, ছিনতাইকারীদের হাত থেকে তো ছেলেটি রেহাই পাবে না। আর মেয়েটিকে সে নিজের মেয়ের পরিচয়ে বড় করবে। তার স্ত্রীর মৃত মেয়ে জন্ম দেওয়ার কথা সে ছাড়া আর কেউ জানে না। এমনকি তার স্ত্রীও না। তার স্ত্রীর যে এখনো জ্ঞান ফেরে নি। তারপর মিতুলকে নিজের মেয়ের পরিচয়ে বড় করে ঐ লোক। দেখতে দেখতে মিতুল এসএসসি পরীক্ষায় বসে। A+ পেয়ে একটি স্বনামধন্য কলেজে ভর্তি হয়। কলেজ শেষ করে খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। পড়াশোনা শেষ করে ডাক্তার হয়। স্কুল শেষ করার পরে আর কখনোই শান্তর সাথে মিতুলের দেখা হয় নি।
সময়ের পরিক্রমায় শান্ত ভুলে গিয়েছে মিতুলকে। মিতুল যে তার আপন বোন। এটা তো জানে না শান্ত। পরিবার ও শিক্ষার্থীদের সাথে ভালোভাবেই সময় পার করে শান্ত। আজও শান্ত ভুলতে পারে না বোনের জন্মদিনের ঘটনাটা। তবে মিতুল আজও ভুলতে পারে না শান্তকে। সে শান্তকে কখনো শিক্ষক মনে করে নি। সবসময়ই ভাই ভেবেছে। তাইতো শান্তকে ভুলতে পারে না মিতুল। কখনো ভুলতে পারবেও না। একেই বুঝি বলে বোনের মায়া।
