মায়ার জালে

মে 7, 2025 - 15:35
জুন 4, 2025 - 02:30
 0  0

গল্প: মায়ার জালে

নাম তার সোনিয়া জান্নাত। মুখে একরাশ শান্তি, চোখে এক অদ্ভুত বিষণ্ণতা।
মারুফ হোসেন প্রথম যেদিন তাকে দেখে, বোঝেনি—এই মেয়েটি একদিন তার জীবনের সবচেয়ে নরম ও কষ্টের অধ্যায় হয়ে উঠবে।

মারুফ একজন চাকরিজীবী। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে রাত আটটা—এই সময়টা চলে যায় কেবল অফিস আর বাসার দায়িত্ব পালনে।
বাড়িতে আছেন বৃদ্ধ মা-বাবা।
তারা দুই ভাই হলেও বড় ভাই নিজেকে পরিবার থেকে আলাদা করে ফেলেছে বহু আগেই। শহরের অভিজাত এলাকায় নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত সে—নিয়ে নেয় অংশের সম্পদ, কিন্তু মায়ের ওষুধ কিংবা বাবার চিকিৎসার খোঁজ রাখে না।
সব দায়িত্ব যেন স্বাভাবিকভাবেই এসে পড়ে ছোট ভাই মারুফের ঘাড়ে।

নিজের কোনো চাওয়া নেই বললেই চলে। সারা মাসের আয়ের শেষ পয়সাটা পর্যন্ত চলে যায় বাসার প্রয়োজন মেটাতে।
মনটা কখনো কাঁদে, কখনো বিদ্রোহ করতে চায়—কিন্তু মায়ের মুখটা দেখলেই সেসব ভাবনা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।

ঠিক তখনই সোনিয়া জান্নাতের সঙ্গে পরিচয়।
এক অফিসিয়াল কনফারেন্সে প্রথম দেখা।
কাজের ফাঁকে দুই-চার কথা, তারপর ধীরে ধীরে সম্পর্ক গাঢ় হয়।
সোনিয়া ছিল শান্ত, সুবোধ, কিন্তু চোখে ছিল অনেক না বলা কথা।
মারুফের মতোই সে-ও নিজের একলা জীবন বয়ে বেড়াচ্ছিল।

দুজন একে অন্যকে বুঝত।
কথা হতো রাতজেগে, হাঁটা হতো নির্জন রাস্তায়, আর স্বপ্ন দেখা হতো নিরবতায়।
সোনিয়া যেন মারুফের জীবনের একমাত্র প্রশান্তির জায়গা হয়ে উঠেছিল।

কিন্তু ভালোবাসা আর দায়িত্বের মাঝে থাকা যে এক যুদ্ধ—সোনিয়া সেটা বুঝে গিয়েছিল।
মারুফ সবসময় চেয়েছে তাকে কাছে রাখতে, অথচ তার সময়, মন, ক্লান্তি সব কিছুতেই থেকেছে মা-বাবার ছায়া।
সোনিয়া হয়তো অনুভব করেছিল—তার জায়গাটা সেখানে ঠিকই, কিন্তু সময়টা নয়।

একদিন সকালে অফিসে পৌঁছে মারুফ দেখল, টেবিলে রাখা একটি খাম।
সোনিয়ার হাতে লেখা চিঠি:

> “মারুফ,
তোমার মতো দায়িত্ববান মানুষ এই সময়ে খুব কম।
তুমি শুধু ছেলে নও, তুমি একা একটা পরিবার।
আমি জানি, আমার ভালোবাসা তোমার কাছে ছিল, কিন্তু তোমার সময় ছিল না।
আমি কোনো দিন চাই না, আমার জন্য তোমার কোনো দায়িত্বে ফাঁক পড়ে যাক।
তুমি ভালো থেকো—এই আশাটুকু নিয়েই আমি চলে যাচ্ছি।
— সোনিয়া”

মারুফ অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিল চিঠিটার দিকে।
কিছু বলার ছিল না। চোখের কোণে কেবল জল, আর বুকের ভেতরে ছড়িয়ে পড়া এক শূন্যতা।

তারপরও জীবন থেমে থাকে না।
মারুফ প্রতিদিন কাজ করে যায়, ওষুধ কিনে আনে, বাবাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।
তবে মাঝে মাঝে রাতে ছাদে উঠে, একলা আকাশ দেখে—আর ভাবে,
মায়া কি ফিরে আসে?

মায়া একটা আলো, যেটা হৃদয়ে পড়ে ছায়া ফেলে।
সে সবসময় পাশে থাকে না, কিন্তু তার অভিজ্ঞতা জীবনকে বদলে দেয়।

সোনিয়া জান্নাত যেমন বদলে দিয়েছিল মারুফ হোসেনের জীবন—চুপিসারে, নিঃশব্দে, একটুখানি ভালোবাসার ছোঁয়ায়।

লেখক, 

মারুফ হোসেন 

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0
Marufhosen25 Maruf HOSEN