শেষ চিঠি

মে 2, 2025 - 01:34
মে 26, 2025 - 22:56
 0  0

জেরিন জাহান

রোদেলা এক বিকেলে। ছোট্ট ক্যাফেটার এক বসে ছিল অনি (শেষ চিঠি)।হাতে ধরা চায়ের কাপটা ঠান্ডা গেছে অনেক আগেই। চোখ দুটো যেন কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছে ‌দু'বছর আগে এই জায়গাতেই প্রথম দেখা হয়েছিল তানিয়ার সাথে।তানিয়া ছিল একেবারেই বিপরীত ধরনের মেয়ে। চঞ্চল, প্রাণবন্ত,হাসলে চোখদুটো চকচক করতো।আর অনি চুপচাপ, ভাবুক,আর কিছুটা একাকি। তানিয়া প্রায় জোর করে‌‌ই অনিকে নিজের জগতে টেনে এনেছিল। তুমি এতো চুপচাপ কেনো হুম? শব্দের চেয়ে নীরবতাই বেশি সত্য বলে অনি বলতো। তাদের প্রেমটা গড়ে উঠেছিল ধীরে ধীরে কিন্তু গভীরভাবে তানিয়া বলতো, তুমি না থাকলে আমি অসম্পূর্ণ। যেন বৃষ্টির দিনে ছাতা ছাড়া পথ হাঁটা।আর শীতের দিনে শীতের পোশাক ছাড়া পথিক।জীবনটা তখন ঠিক সিনেমার মতো লাগছিল। কিন্তু সিনেমা আর বাস্তবের মাঝখানে অনেক পার্থক্য থাকে।দেয়াল থাকে নাম হচ্ছে সময়।অনির শরীরে তখন ধরা পড়েছিল ক্যান্সার । তানিয়ার থেকে লুকিয়ে গিয়েছিল সেটা।সে চাইছিল না তানিয়া তার শেষ দিনগুলো দুঃখ কষ্টে কাটাক, ভালোবাসার বদলে বোঝা টেনে
বাঁচুক।করতো তানিয়া সব বুঝে গিয়েছিল। চোখের ভাষা তো প্রেমিকের চেয়ে ভালো আর কেউ পড়েনা।এক রাতে ,অনি তার ঘরে বসে একটা চিঠি লিখছিল। প্রিয় তানিয়া আমার সবটুকু ভালোবাসা তোমার জন্য রেখে গেলাম।তুমি হেসো খেলো তুমি করে বাঁচো । তুমি যেন আবার আমার পাশে দাঁড়িয়ে থেকো।ভালোবাসি তোমার চেয়ে ও বেশি।
চিঠিটা রেখে সে হাসপাতালের পথে বেরিয়ে পড়ে। তানিয়া তার আগেই পৌঁছে যায়।তুমি কি ভেবেছো পালিয়ে গিয়ে আমাকে রক্ষা করবে! তুমি কাঁদবে না জেনে আমি শান্তি পাবো। তানিয়া শক্ত হাতে অনির হাত ধরে বলল,এই জীবনে তুমি থাকো বা না থাকো আমি শুধু তোমাকেই ভালোবেসে যাবো। শেষের কয়েকটি দিন তারা একসঙ্গে কাটিয়েছির। চুপচাপ,চোখে চোখ রেখে প্রতিটা মুহূর্ত শকে ধরে রেখে। তারপর একদিন সকালে হাসপাতালের ঘরে অনির নিঃশ্বাস থেমে যায়। চোখের কোণ থেকে নেমে আসা একফোঁটা জল থেকে ছিল তানিয়ার হাতে।আজ দু বছর পর তানিয়া আবার সেই ক্যাফেতে এসে বসে। টেবিলের উপর চিঠিটা রাখা -অনির লেখা শেষ চিঠি। সে ধীরে ধীরে পড়তে থাকে। আর বাইরে বৃষ্টি নামে। ঠিক যেমন সেদিন শেষ বিদায়ের দিন। তানিয়ার এই কষ্ট কেউ সহ্য করতে পারেনা। বাড়ির সবাই তাকে বোঝায় যেন সে অতীত নিয়ে পড়ে না থেকে। নতুন করে বাঁচার চেষ্টা করে। তানিয়া বলে যার ভালোবাসা কখনো শেষ হয়নি তাকে কিভাবে এতো সহজে ভুলে যাবে।তবু সময়ের কিছু টান থাকে। একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণমিলনী এক অনুষ্ঠানে যোগ দেয় তানিয়া। সেখানে দেখা হয় আদিত্যের সাথে।আদিত্য তানিয়ার পুরানো সহপাঠী,যাকে সে আগে খুব একটা গুরুত্ব দিতো না। আদিত্য ছিল সহজ, শান্ত আর সহানুভূতিশীল। তানিয়ার মুখ থেকে অতীত জানার পরেও আদিত্য তানিয়ার পাশে থেকেছে। তানিয়া প্রথমে অস্বস্তিতে ছিল, নিজেকে প্রশ্ন করছিল আমি কি অনিকে প্রতারণা করছি। তারপর অনির শেষ চিঠিটা বের করে পড়তে থাকে।তানিয়া অনির চিঠির লেখার মানে বুঝতে পারছিল ।যে অনি চাইতো সে মারা গেলে তানিয়া যেনো একা না বাঁচে । নতুন কাউকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে তানিয়া আদিত্যের সাথে কথা বলতে শুরু করে হাঁটতে শেখে নতুন পথে। কিন্তু ভালোবাসা পুরানো হয়না। তানিয়া প্রতিদিন রাতে অনির ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বলে-আজো তোমাকে ভুলিনি অনি। শুধু তোমাকে নিয়ে বেঁচে আছি ।

stack of letters 447579 1280

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0
@zerin609 Zerin Jahan Disha Disha